স্টাফ রিপোর্টার: শ্রমিক উন্নয়নের গালভরা গল্প শোনায় বামেরা। কিন্তু বাস্তবিক চটকল শ্রমিকদের কল্যাণে ঐতিহাসিক চুক্তি করল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। একদিকে বেতনবৃদ্ধি, অন্যদিকে এক ঝটকায় ৯০ শতাংশের বেশি কর্মীর স্থায়ীকরণ। রাজ্য সরকারের এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে রাজ্যের কার্যকরী ২৩টি চটকল মজদুর সংগঠন। বৃহস্পতিবার নবমহাকরণ বিল্ডিংয়ে এই কথাই জানালেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বলেন, “এতদিন শুধু শ্রমিক উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে এসেছে বামেরা। কিন্তু আসল উন্নয়ন করে দেখাল রাজ্য সরকার।” মলয়বাবু আরও জানালেন, “১৫ বছর যে শ্রমিক কাজ করবেন তাঁদের ‘স্পেশাল বদলি’ হিসাবে উন্নীত করা হবে। ২০ বছর যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের চাকরি স্থায়ী হবে। এই হিসাবে রাজ্যে কর্মরত ৯০ শতাংশের বেশি চটকল শ্রমিক স্থায়ী হয়ে যাবেন।”
উল্লেখ্য, রাজ্যে এখন আড়াই লাখের মতো চটকল শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের বেশিরভাগই অস্থায়ী। বেশিরভাগই ২০০২ সালে কাজে যোগ দিয়েছেন। চাকরির বয়স ২০ বছরের বেশি হওয়ায় নতুন সিদ্ধান্তে প্রায় সবাই স্থায়ী হয়ে যাবেন। বাকি ১০ শতাংশ কর্মী স্থায়ীকরণের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবেন। অর্থাৎ এক চুক্তিতেই প্রায় সব চটকল শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে ফেলল রাজ্যের শ্রম দপ্তর। এমনটাই জানালেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে এই মুহূর্তে দু’টি বাদে সব জুটমিলই চালু রয়েছে। এদিন সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরও একটি সুখবর শুনিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘গৌরীপুর জুটমিল’ এবং ‘নিউ সেন্ট্রাল জুটমিল’ খোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, আইনি জটিলতা কেটে গিয়ে দ্রুত সাফল্য আসবে। এদিনের বৈঠকে মলয়, ঋতব্রত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, দলের প্রবীণ শ্রমিক নেতা শক্তি মণ্ডল। ছিলেন অতিরিক্ত লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত।
রাজ্য যখন নজির সৃষ্টি করে ডান-বাম সমস্ত সংগঠনকে নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করেছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পাটবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঋতব্রত। তাঁর অভিযোগ, পাটজাত দ্রব্যকে বাদ দিয়ে সিন্থেটিক দ্রব্যকে তুলে ধরছে কেন্দ্র। এর ফলে সমস্যায় পড়ছে চটকলগুলি। তিনি আরও বলেন, ‘‘বাম জমানায় মাত্র ৫০ পয়সা বা এক টাকা বেতন বেড়েছিল। বেতন কমানোর নজিরও রয়েছে। আর এখন একধাক্কায় সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি বেতন বৃদ্ধি হল।’’ নতুন চুক্তি উল্লেখ করে ঋতব্রত এদিন বলেন, নতুন যে সব শ্রমিক এখন জুটমিলের কাজে যোগ দেবেন তাঁদের মোট বেতন হবে মাসিক ১৪,০৬৬ টাকা যা আগের নতুন যুক্ত হওয়া শ্রমিক যা পেতেন তার থেকে প্রায় ৩,৫৬২ টাকা বেশি। সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকদের বর্তমান মাসিক বেতন ১৬,৭১৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১৭,২৭১ টাকা। ২০১৯ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক বেতন ১৩,৫৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৪,১৩২ টাকা হবে। ২০০২ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক বেতন ১৫,২১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৫,৮৩৭ টাকা। এছাড়া আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
এদিকে এই ঐতিহাসিক সাফল্যের উদযাপনে চলতি মাসেই একাধিক কর্মসূচি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সোমনাথ শ্যাম জানান, চটকল শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা বোঝাতে চলতি মাসজুড়ে প্রতিটি চটকলের সামনে গেট মিটিং হবে। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বারাকপুরে একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশের ডাক দেওয়া হবে। যেখানে এই চুক্তি সম্পাদনের জন্য রাজ্যের সমস্ত চটকল শ্রমিক উপস্থিত থেকে ধন্যবাদ জানাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উল্লেখ্য, বুধবার জুটমিলের মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ, সেই সংগঠনের বাইরে থাকা জুটমিলের প্রতিনিধি ও সবমিলিয়ে ২৩টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে রাজ্য শ্রম দপ্তরের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি তো বটেই, উল্লেখযোগ্যভাবে চুক্তিতে সই করেছে সিটু-সহ সব শ্রমিক সংগঠন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.