সুদীপ রায়চৌধুরী: বাংলায় অশান্তির কোনও জায়গা নেই। হিংসা এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলতে হবে। ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ উপলক্ষে নিজের বক্তৃতায় এমনই কড়া কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Anand Bose)। পাশাপাশি তিনি এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu) একটি বার্তায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনালেন রাজ্যপাল। জানান যে রাষ্ট্রপতির বার্তা অনুযায়ী আজ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হচ্ছে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত, বক্তৃতায় বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরার ফাঁকে ফাঁকেই তিনি বর্তমান রাজ্য সরকারের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন। যার তীব্র নিন্দা করেছে শাসকদল।
মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি, ফোনে আপত্তি সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাজভবনে পালিত হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ (West Bengal Divas)। সেই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিজে বসে দেখেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের অনেকে। নাচ-গানের অনুষ্ঠানের পর রাজ্যপাল বক্তব্য রাখতে উঠে বাংলার মণীষীদের স্মরণ করেন। বলেন, ”রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বিবেকানন্দ বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিশাল অবদান রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জন্য।”
রাজ্যপালের কথায়, ”আমাদের সংবিধান আমাদের ন্যায় বিচারের অধিকার দিয়েছে। তাই সেই সমস্ত সংস্থাকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের নতুন প্রজন্মকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। বাংলার মানুষের সমস্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বাংলাকে উজ্জ্বল করেছেন। আমি বাংলার মানুষকে স্যালুট জানায়। দেশের একতা এবং উন্নয়নে বাংলার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা এখন উন্নতির পথে। বাংলার সাফল্য ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলা তৈরি করে দিয়েছে জাতীয় সংগীত। বাংলায় অশান্তির জায়গায় নেই। হিংসার জন্য ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে।” এরপর তিনি আরও বলেন, ”রাজ্যবাসী হাজার সমস্যার মধ্যেও যেভাবে এগিয়ে চলেছে, আমি বিস্মিত। সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব ও ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা করব। মানুষ যেভাবে আমাকে ভালবাসা দিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। আমাদের সবাইকে আমাদের মৌলিক কর্তব্য মনে রাখতে হবে।”
তাঁর মুখে এও শোনা যায়, অন্ধকার সময়ে তিনি কাচের ঘরে বসে থাকতে পারি না। সেই অবস্থায় তাঁর যা কর্তব্য মনে হয়েছে, সেটাই করেছেন। এই বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এই মন্তব্য রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলেই মনে করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে রাজ্যপাল কেন বারবার এ ধরনের শব্দে জোর দিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ”এসব পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিন ছিল না। রাজ্যের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পরিপন্থী। তৃণমূল নিন্দা করছে। যথা সময়ে মুখ্যমন্ত্রীও জবাব দেবেন।” আর বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ”পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। রাজ্যপাল যথেষ্ট শিক্ষিত, প্রচুর পড়াশোনা। উনি ইতিহাস জেনেই আজ এই দিবস পালন করেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.