রাহুল চক্রবর্তী: সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানেও জিইয়ে রইল রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী সংঘাত। দেখা হলেও, কথা হল না দু’জনের। পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিধানসভায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মোদির ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। নাম না করে পালটা রাজ্যপালকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংবিধান দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল দু’টি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দু’জনেই একে অপরকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। রাজ্যপাল বিধানসভার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তবে রাজভবনের পৃথক অনুষ্ঠানে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার প্রসঙ্গে সুর চড়ান রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “সংবিধান দিবস উপলক্ষে আমি রাজভবনে অনুষ্ঠান করছি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মাসখানেক আগে। তা সত্ত্বেও মমতা যাননি। বিধানসভার আমন্ত্রণ পেয়েছি অনেক পরে।”
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তা সত্ত্বেও আমাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছি। আপনারা নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজ্য।” বিধানসভার অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বক্তৃতা শেষ করে বিধানসভা থেকে বেরনোর সময় ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল বিধায়করা। সেই সময় ঠিক রাজ্যপালের পিছনেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদির প্রশংসার পরেই এমন স্লোগান শুনে স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন ধনকড়।
এরপরই সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে নাম না করে রাজ্যপালের তুলোধোনা করেন তিনি। কে বা কারা তাঁকে পাঠিয়েছেন, তা জানা বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে নাম না করে হিন্দি গানের কলি উদ্ধৃত করে সুর চড়িয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে অনেক রাজ্যপালের সঙ্গে কাজ করেছি। এমন তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যেও সাহস নিয়ে আমরা কাজ করে চলেছি।” রাজ্যপালের গলায় মোদির প্রশংসা যে তিনি মোটেও ভালভাবে নেননি তা এদিন বক্তৃতার মাধ্যমে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,”উনি বারবার বক্তব্যে কাশ্মীরের কথা তুলে ধরছেন। বাংলার রাজ্যপাল হয়েও বাংলার কথা ভুলেই গিয়েছেন।”
রাজভবনের অনুষ্ঠানে যেতে না পারার কথা আগেই রাজ্যপালকে জানানো হয়েছিল বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বারবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল। তলানিতে ঠেকেছে নবান্ন-রাজভবন সম্পর্ক। সেকারণে যদিও রাজ্যপালের ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একের পর এক নানা ঘটনাতেই বারবার সামনে এসেছে দু’পক্ষের সংঘাত। সেই তালিকাতেই নবতম সংযোজন সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.