স্টাফ রিপোর্টার: শুধু বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নয়। ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবসময় থাকতে পারে, কখনও বেশি, কখনও কম। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রাজ্য প্রশাসনের বৈঠকে বছরভর ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। দেখা গেল, আশঙ্কাটা মোটেই অমূলক নয়। কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। চলতি বছরেও পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা এখনই স্পষ্ট নয়। কারণ এখনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের উপর।
ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতবছর রাজ্যে ৫৭ হাজার ২৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় সাডে় ১৪ হাজার। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, বর্ষা আসতে এখনও অনেকটাই দেরি। তারমধ্যেই যদি মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ এতটা বাড়তে শুরু করে তবে, পুজো পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষার আগেই পতঙ্গবিদদের দিয়ে কাজ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালাতে হবে।
গত বছর রাজ্যের মধ্যে কলকাতা পুরসভা এলাকাতেই ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সব থেকে বেশি ছিল। ডেঙ্গু পজ়িটিভ হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার জন। এবং ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন সাড়ে ১৪ হাজার জন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বর্ষা আসতে এখনও দেরি থাকলেও রাজ্যে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় বারোশো। তবে মৃত্যুর কোনও খবর মেলেনি। কারণ, প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগেই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যাঁদের একটা বড় অংশের ডেঙ্গু পজ়িটিভ আসছে।
তবে পরীক্ষা বেশি হওয়ার কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হচ্ছে বলেই দাবি স্বাস্থ্য কর্তাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ১০৬টি সরকারি হাসপাতাল এবং পুরসভা স্তরে প্রায় ২৫০টি জায়গায় পরিস্থিতি যে জোরালো হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে কলকাতার চিত্র দেখলেই। গত জানুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত শহরে ৮৩ জন ডেঙ্গু এবং ৩৬৫ জন ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্টেও মশাবাহিত রোগের প্রকোপের ক্ষেত্রে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বসিরহাট স্বাস্থ্যজেলার উল্লেখ রয়েছে। আরও জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল এ রাজ্যে। সেবারে আক্রান্ত ছিল ৩৭ হাজার ৭৪৬ জন। তারপরে আবার ২০২২-এ ৬৭ হাজার আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ স্থানে গিয়েছে বঙ্গ। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুই বলেছেন , ‘‘দেশে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ পুরোপুরি নির্মূল করা রীতিমতো কঠিন। এবং বিভিন্ন এলাকাতে তিন-চার বছর অন্তর মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ফিরে আসবে। তাই বর্ষার আগেই পতঙ্গবিদদের দিয়ে সমীক্ষা, সচেতনতা শিবির করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.