মলয় কুণ্ডু: শুধু সেল নয়, কলকাতায় থাকা আরও চারটি কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে (Dharmedra Pradhan) চিঠি লিখলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। চিঠিতে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, টি বোর্ড, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি, ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স এবং কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র। এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তরফে সুস্পষ্ট আশ্বাস দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অমিত মিত্র জানিয়েছেন, বিজেপি (BJP) সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের একাধিক ঐতিহ্যশালী রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থার সদর দপ্তরগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সে ক্ষেত্রে সেল নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং এর আগেও একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শাখা হয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অথবা এখান থেকে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে এদিন চিঠিতে তিনি সব থেকে বেশি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কলকাতা শহরে থাকা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যশালী চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬৭ বছর ধরে কলকাতায় টি বোর্ডের সদর দপ্তরটি। এটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (DVC) সদর দপ্তরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন অমিত মিত্র (Amit Mitra)। আরও দুটি সংস্থার উল্লেখ করেছেন তিনি, ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স কোম্পানির সদর দপ্তর এবং ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী প্রাচীন কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ। এই দুটি সংস্থাকেও কেন্দ্র এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে দাবি করেন অমিত মিত্র।
ধর্মেন্দ্র প্রধানকে লেখা আগের চিঠিতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হওয়ার পরই কার্যত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিন চিঠিতে অমিত মিত্র সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রে বিজেপি (BJP) সরকারের দিকে। তাঁর বক্তব্য, একের পর এক কারখানাকে রাজ্য থেকে গুটিয়ে নিতে চাইছে তারা। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৭ সালে হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বা এইচএসসিএলের কর্পোরেট অফিস কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে চলে যাওয়া হয়। তারপর ২০২০ সালে কোল ইন্ডিয়া তার সাবসিডিয়ারি বা সহায়ক অফিস সরিয়ে নিয়ে যায়। ইস্টার্ন কোলফিল্ডস, ভারত কুকিং কোল, সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস, সাউথ ইস্টার্ন কোলফিল্ডস এবং মহানদী কোলফিল্ডসের মার্কেটিং এবং সেলস অফিস কলকাতা থেকে ধানবাদ, বিলাসপুর এবং সম্বলপুরে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। তার আগে ২০১৮ সালে কলকাতা থেকে মুম্বই নিয়ে চলে যাওয়া হয় স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টস হাব। ২০২০ সালে ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এবার সেলের কাঁচামাল বিভাগের দপ্তর কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি লেখেন অমিত মিত্র। এদিন সেই প্রসঙ্গে তিনি চিঠিতে শুরুতেই লিখেছেন, তাঁর আগের চিঠির উত্তর দেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যদিও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে সেলের (Sail) কর্মী ও তাঁদের পরিবার জড়িত। তিনি জানিয়েছিলেন, সেল নিজের দপ্তর কলকাতা থেকে সরিয়ে নিলে বহু কর্মী কাজ হারাবেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন তাঁরা। শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাই নন, স্থায়ী কর্মীদেরও এমন অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যে পরিবার পরিজন এবং সন্তানদের ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে। সেলের দপ্তর যাতে স্থানান্তরিত না হয়, সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত জানানোর আবেদন করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.