মলয় কুণ্ডু: রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (Steel Authority of India ) বা সেল–এর কাঁচামাল বিভাগের দপ্তর কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বুধবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে (Dharmendra Pradhan) চিঠি পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি। চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, সেল নিজের দপ্তর কলকাতা থেকে সরিয়ে নিলে বহু কর্মী কাজ হারাবেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন তাঁরা। শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাই নন, স্থায়ী কর্মীদেরও এমন অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যে পরিবার পরিজন এবং সন্তানদের ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে অমিতবাবুর আবেদন, SAIL-র বোর্ডে থাকা মন্ত্রকের আধিকারিকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করুন।
একইসঙ্গে অমিতবাবু (Amit Mitra) বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হওয়ার পরই কার্যত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন পদক্ষেপ নিয়ে সেলের উপর নির্ভরশীল দূর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ও ইসকোর মতো রাজ্যের দুটি ঐতিহ্যশালী কারখানাকে চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে অমিত মিত্র আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কারখানা দুটিকে কার্যত পঙ্গু করে বিলগ্নীকরণের নামে সেগুলিকে বিক্রি করে দেওয়াও হতে পারে। স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া কাঁচামাল সরবরাহ দফতর কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন কর্মীরা। চিঠিতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, প্রায় ১৫০ জন কর্মী দপ্তর স্থানান্তরে কর্মহীন হতে পারেন। এই ঘটনা ঘটলে সমস্যায় পড়বে রাজ্যের দু’টি রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প সংস্থা দূর্গাপুর স্টিল প্লান্ট বা ডিএসপি এবং ইসকো।
সূত্রের খবর, কাঁচামাল বিভাগ তুলে দেওয়া হলে এবং কোনও স্থানীয় লৌহ আকরিক খনির সঙ্গে ডিএসপি এবং ইসকোকে যুক্ত না করা হলে বাজার থেকে তাদের অনেক বেশি দামে লৌহ আকরিক কিনতে হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লোকসানের মুখে পড়বে এই দুই প্রতিষ্ঠান। সংস্থার কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে জানান, সেল কলকাতার কাঁচামাল দপ্তরটি তুলে দিয়ে দূর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (DSP) এবং ইসকোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। অমিত মিত্রও চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, সেলের কাঁচামাল বিভাগের আওতায় রয়েছে প্রায় ১৫টি লৌহ আকরিকের খনি এবং কয়লা–সহ বহু খনিজ পদার্থ। পশ্চিমবঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে সেলের কাজের জন্য যত স্টিল সংশ্লিষ্ট পণ্য ব্যবহার হয়, তার কাঁচামাল অর্থাৎ লৌহ আকরিক ও কয়লা সরবরাহের ব্যবস্থা করে কলকাতার এই কাঁচামাল দপ্তরটি। তাই কলকাতা থেকে সংস্থাটির কাঁচামাল দফতর বন্ধ করে দিলে শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না, দু’টি সংস্থাও চূড়ান্ত সমস্যায় পড়বে। সেলের কর্মী সংগঠনের তরফে দিল্লির ইস্পাত ভবনে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে পর সংগঠনের প্রতিনিধিদের আশ্বাসও দেওয়া হয় যে সেলের নবনিযুক্ত এবং সেলের প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না, যাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর পরও এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অমিতবাবু। এদিকে তৃণমূলের (TMC) শ্রমিক সংগঠন ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কেন্দ্র যদি সেলের দপ্তর সরানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, তাহলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.