ফাইল ছবি
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: চার দফার ভোট হয়ে গিয়েছে। বাকি শেষ চার দফার ভোটে তফসিলি ভোট-ব্যাংকে বিশেষ নজর গেরুয়া শিবিরের। তফসিলিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে তো বটেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও তফসিলি সমাজের কল্যাণে মোদি সরকারের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে তারা। বাকি চার দফার ভোটে তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৩৭টি আসনই লক্ষ্য গেরুয়া শিবিরের।
রাজ্যে তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত এরকম ৬৮টি বিধানসভার আসন রয়েছে। তার মধ্যে ভোট বাকি রয়েছে ৩৭টি আসনে। ৩১টি আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত ১৬টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনের ভোটপর্বও বাকি রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত যে ৩৭টি আসনে ভোট বাকি রয়েছে, সেগুলি হল, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, হেমতাবাদ, কুশমণ্ডি, গঙ্গারামপুর, গাজোল, মালদহ, নবগ্রাম, খড়গ্রাম, বড়ঞা, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, কল্যাণী, হরিণঘাটা, বাগদা, বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ, গাইঘাটা, স্বরূপনগর, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবা, খণ্ডঘোষ, রায়না, জামালপুর, কালনা, বর্ধমান উত্তর, আউশগ্রাম, গলসি, দুবরাজপুর, নানুর ও সাঁইথিয়া। পরিসংখ্যান বলছে, ভোট হতে যাওয়া তফসিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত এই ৩৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২১টি আসনে। তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ১৫টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে মাত্র ১টিতে। অন্যদিকে, তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত ভোট বাকি থাকা ৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৫টিতে। তৃণমূল ১টি আসনে এগিয়ে।
গত লোকসভা ভোটের হিসাবের নিরিখে দেখলে রাজ্যে তফসিলি জাতির ৬৮টি আসনের ফলাফল হচ্ছে, তৃণমূলের প্রাপ্ত ৩৪টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ৩৩টি আসন। কংগ্রেস ১টি। তফসিলি আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ছিল ৪৪.৭ শতাংশ। তার থেকে কিছুটা কম তৃণমূলের শতকরা ভোট ছিল ৪৩.৯৮ শতাংশ। বামেদের ৬.১০ শতাংশ ও কংগ্রেসের ৩.২৫ শতাংশ। আর এই ফলাফলের নিরিখেই হিসাব কষছে বিজেপি। তারা চাইছে তফসিলি ভোট ব্যাংকে ভালরকম থাবা বসাতে। সেজন্য বাকি চার দফার ভোট সামনে রেখে বিজেপি নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তফসিলি-দলিত সমাজের কথা তুলে ধরছে। সেই সমাজের প্রতি তৃণমূল অন্যায়-অত্যাচার করছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে তারা। ‘আর নয় তফসিলিদের প্রতি অন্যায়’ এই হ্যাশট্যাগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও শুরু হয়েছে।
শীতলকুচির ঘটনা নিয়েও তফসিলি অস্ত্র বিজেপির হাতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোট প্রচারে এসে বলেছেন, তফসিলি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতেই শীতলকুচি চক্রান্তের ব্লু-প্রিন্ট মুখ্যমন্ত্রীর। আবার নদিয়া, জলপাইগুড়ি, পূর্ব বর্ধমান ও পাহাড়ের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর জাতির প্রাধান্য। তাই গত ১২ এপ্রিল রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদির ভাষণে উঠে ওইসব সম্প্রদায়ের কথা। আবার নাম না করে আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা খাঁর তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রতি অবমাননাকর একটি মন্তব্যকেও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। তফসিলি জাতি-উপজাতি-ওবিসিরা যাতে ভোট দিতে না পারে, তার রণনীতি তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন অভিযোগও তুলেছেন মোদি। সুজাতা খাঁর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপির তফসিলি মোর্চা পথে নেমে পড়েছে। তফসিলিদের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে বুধবার থেকেই জেলায় জেলায় প্রতিবাদসভা শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপি। লক্ষ্য একটাই, আগামী চার দফার ভোটে তফসিলি ভোটব্যাংক ধরে রাখা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.