দীপঙ্কর মণ্ডল: ইসলামপুরে গুলিবিদ্ধ দুই ছাত্রর মৃত্যু। কে বা কারা গুলি চালাল? পাঁচদিন পরেও উত্তর নেই। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের দাবি পুলিশ গুলি চালায়নি। ইতালি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাই ঘোষণা করেছেন। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, তদন্তের আওতা থেকে বাদ যাবে না পুলিশও। ৫ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের প্রত্যেকটি স্কুলের যাবতীয় নথি তলব করেছে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে পার্থবাবুকে মন্ত্রিগোষ্ঠীর শীর্ষকর্তা নির্বাচন করে গিয়েছেন। বিকাশ ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে এদিন পার্থবাবুর মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দাঁড়িভিট স্কুলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক। এর পিছনে কারা ছিল তা খুঁজে বের করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কঠোর হতে বলেছেন। প্রধান শিক্ষক, পরিচালন সমিতি বা পুলিশ কেউ তদন্তের বাইরে থাকবেন না।” প্রসঙ্গত, দুই ছাত্রের মৃত্যুর পর রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্য বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। ইতিমধ্যে রাজ্যজুড়ে ছাত্র ধর্মটও করেছে এসএফআই। এদিনও বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এআইএসএ লালবাজার অভিযান করে। এহেন পরিস্থিতিতে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের সচিব, কমিশনার ও জেলা স্কুল পরিদর্শকদের (মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক) নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পার্থবাবু। সেখানে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ইসলামপুরের স্কুলটিতে বেআইনিভাবে উর্দু ও সংস্কৃতের শিক্ষক পাঠানো হয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিকস্তরে ওই পদ ছিল না। মাধ্যমিকস্তরের পদ পরিবর্তন (কনভারশন) করে পদগুলিকে উচ্চমাধ্যমিকস্তরে উন্নীত করেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। এবার থেকে কোনও স্কুল পরিদর্শক এই কাজ করতে পারবেন না বলে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু।
জেলা স্কুল পরিদর্শকদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অফিসে বসে থাকলে হবে না। স্কুলে স্কুলে যান। স্কুলের পরিকাঠামো, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা, শিক্ষকদের সংখ্যা ও শূন্যপদ আছে কি না তা সরকারকে জানান। নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা জেলাশাসক ও স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে জানাবেন।” স্কুল পরিদর্শকরা এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডলের অভিযোগ, “এই সরকারের আমলে প্রচুর বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে পদের কথা জানানোর পর তা পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে এমন কাজ করেছে সরকার। আমরা তীব্র নিন্দা করছি।” প্রসঙ্গত, স্কুলশিক্ষা দপ্তর স্কুল পরিদর্শকদের নিয়ে মাঝেমধ্যে বৈঠক করে। ইসলামপুরে গুলি চালানোর ঘটনায় এদিন জরুরী ভিত্তিতে বৈঠক ডাকা হয়। প্রথমে ঠিক হয় দপ্তরের সচিব ও কমিশনার বৈঠক করবেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে যোগ দেন। উর্দু এবং সংস্কৃতের পরিবর্তে অন্য শিক্ষকের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই দাড়িভিট স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্যাডে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয় ওই দুই শিক্ষককে নেওয়া হবে না। ২০ তারিখ স্কুলে পুলিশ নিয়ে ঢোকেন দুই শিক্ষক। আন্দোলন তীব্র হয়। গুলি চলে। স্কুলের অদূরে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক প্রাক্তন ছাত্র। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আর প্রাক্তনীর। এখনও গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রর চিকিৎসা চলছে। ঘটনার জেরে স্কুলে ভাঙচুরও চলেছে। এ প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষক পদ ২২টি। সব পদেই শিক্ষক ছিলেন। তবে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক চাইতেই পারে। কিন্তু কি এমন ঘটল যে সংঘটিতভাবে একদল লোক মৃত্যু ঘটাল। এই ঘটনা বর্বোরচিত। স্কুলটিকে ধ্বংস করা হল। ছাত্রদের দিয়ে তা হয়নি। তাদের পিছনে কারা ছিল তা দেখতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.