বুধবার সিটি কলেজে ব্রাত্য বসু।
সৌরভ দত্ত: প্রাণবন্ত পড়ুয়ারা ছিল। তাদের নানা প্রশ্নও ছিল। সহকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল। কমনরুমের বৈঠকও ছিল। ক্যান্টিনের আড্ডা ছিল। আবার ফিরে দেখার টানও ছিল। বহুদিন পর তিনি এলেন। পুরনো সেই দিনের কথায় অতীতকে ছুঁয়ে গেলেন। অনাবিল আড্ডায় হাসলেন, হাসালেন। চলার পথের সঙ্গীদের চিনে খোঁজ নিলেন। প্রিয় পড়ুয়াদের আগামীর সুলুক দিলেন। এবং উড়ে আসা প্রশ্নের জবাবে আশা আর ভরসা জুগিয়ে গেলেন লাগাতার। রাজা রামমোহন রায় সরণির সাবেক খিলানওয়ালা সেই বাড়িতে নিত্য আনাগোনায় তিনি নিজেই ইতি টানলেন বুধবার। সিটি কলেজের (City Collage) অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টারে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে শেষবারের মতো সই করে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জমা দিলেন ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)।
কর্মজীবন শেষ হওয়ার এক দশকেরও বেশি আগে প্রাক্তন অধ্যাপকের তকমা আপন করে নিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। সহকর্মীরা অনুরোধে মুখর, এখনই বিদায় বোলো না…! পড়ুয়ারা নাছোড়, যাবেন না স্যর। কিন্তু ব্যস্ত মন্ত্রী তথা বিদায়ী অধ্যাপক অনড়, “আমি তো আসতে পারি না। পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু শুধু জায়গা আটকে থাকব কেন? বরং নতুন কেউ আসুক, ছাত্রছাত্রীদেরও সুবিধা হবে।”
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আবহে কণ্ঠ ছেড়েছেন, আবার অন্য কালের ভোরের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থেকেই শিক্ষাদানের ব্রতও পালন করে গিয়েছেন নিষ্ঠাভরে। ২০১১-তে পালাবদল পর্বে ২০ মে তিনি লিয়েনের আবেদন করেন। রাজ্যের নয়া তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রথম লিয়েন তথা দীর্ঘকালীন ছুটি মঞ্জুর হয় ২০১৬ সালের ২৬ মে পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্বে কলেজে তাঁর ছুটি মঞ্জুর হয় ২০২১ সালের ২৬ মে অবধি। তার পরও বিধি মেনেই দীর্ঘ ছুটির আবেদন করেন রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম এই সদস্য। সেই আর্জি মঞ্জুরও হয়েছিল। তার মাঝেই এবার স্বেচ্ছায় কলেজ থেকে পাকাপাকি ছুটি নিয়ে নিলেন মাননীয় মন্ত্রী।
বহুদিন পর তাঁকে কাছে পেয়ে বুধবার সহকর্মীরা কেউ খোঁজ নিলেন তাঁর নাট্যচর্চার। কারও কথাবার্তায় উঠে এল অ্যাকাডেমিক নানা প্রসঙ্গ। কেউ আবার চলচ্চিত্রেও তাঁর সফল ভূমিকার প্রশংসায় হলেন পঞ্চমুখ। কলেজের এখনকার পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রাজ্য বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্যসচেতক তাপস রায়, অধ্যক্ষ শীতলপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়-সহ সমিতির সদস্যরাও এদিন এসেছিলেন ব্রাত্যর বিদায় সংবর্ধনায়। পুষ্পস্তবক তুলে দেন তাঁরা। কলেজের অশিক্ষক কর্মী ও ছাত্র সংসদের তরফেও বিদায়ী অধ্যাপককে এদিন সংবর্ধিত করা হয়।
অধ্যাপক ও কলেজের অধ্যক্ষ শীতলপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “চারতলায় ছিল আমাদের বোটানি ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু বেশ মনে পড়ে কমনরুমে বহু গল্প, আড্ডা হত ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে। তাঁর মতো মানুষকে আর কলেজে পাব না, এটা আমাদের ক্ষতি সন্দেহ নেই। তবে তিনি তো আমাদের গর্বও বটে। আমরা নিশ্চিত কলেজের স্বার্থে তাঁর অকুণ্ঠ সহযোগিতা মিলবে বরাবরই।” কলেজের এখনকার পড়ুয়ারা প্রায় সকলেই তাঁর অপরিচিত। কিন্তু পরম স্নেহে কাছে ডেকে কলেজের চৌকাঠ ডিঙোনোর পর তাদের নয়া উড়ানের দিশাও এদিন চিনিয়ে দিলেন ‘ব্রাত্য স্যর’। হাত বাড়ালেই মন্ত্রী স্বয়ং।
তাই একাধারে অভাব-অভিযোগ এবং আবেদনও উঠে এল একাধিক– অশিক্ষক কর্মীর সংখ্যা কলেজে কমতে কমতে তলানিতে। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। হস্টেল চালু করার মতো আরও একাধিক কাজ এখনও ঝুলে। এই সব বিষয়ই নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে তাঁর দপ্তরে জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রাত্য। কলেজের অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া সবাই নিশ্চিত, কথা রাখবেন মন্ত্রীমশাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.