সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের বিসর্জন নির্দেশিকা খারিজ না করেই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মহরমের দিন দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে। দশমীর পর যে কোনও দিন বিসর্জন দেওয়া যাবে। আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও রাজ্যের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। বিসর্জন নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে বিসর্জন ও মহরমের মিছিল আলাদা রুটে যাবে। হাই কোর্টের রায় ঘোষণার পরই নবান্নে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারও। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেন পুলিশের দুই শীর্ষ কর্তা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। চতুর্থী থেকে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কড়া হাতে সামলানো হবে। এদিন কলকাতার একাধিক বড় পুজোর উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মমতা। সেখান থেকে নাম না করে মমতার বার্তা, ‘যাঁরা বাংলায় থাকে, অথচ বাংলা নিয়ে গর্ব করে না, তাঁদের জন্য করুণা হয়।’ আদালতের রায়কে কার্যত ‘হাইজ্যাক’ করে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও। বিজেপির দাবি, এই জয় আদতে তাদেরই। বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, রাজ্যে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করল আদালতের নির্দেশ। দিলীপবাবু বলেন, ‘হিন্দুদের ধার্মিক অধিকার মানতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। সরস্বতী পুজো করতে দেব না, রামনবমীর শোভাযাত্রায় লাঠিচার্জ করব – কোথা থেকে আসে এত ঔদ্ধত্য? নইলে কি আর আমাদের দুর্গাপুজোর বিসর্জনের জন্য হাই কোর্টে যেতে হয়?
আদালত এদিন নির্দেশ দেয়, দশমীর সন্ধ্যা থেকে প্রতিদিনই বিসর্জন দেওয়া যাবে। রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে প্রতিমা নিরঞ্জন। মহরমের দিন একদিকে তাজিয়া, অন্যদিকে বিসর্জনের শোভাযাত্রা এক সঙ্গে বেরলে সমস্যা হতে পারে জানিয়ে ওইদিন সন্ধ্যার পর ভাসানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। সেই নিয়েই জনস্বার্থ মামলা হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এজলাসে। সেই মামলার চূড়ান্ত শুনানি ছিল এদিন। শুনানি পর্ব শেষে রায় দিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি ও বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। যেহেতু সময় অত্যন্ত কম, তাই রাজ্য সরকারের বিসর্জন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পুরোপুরি খারিজ না করে অন্তর্বর্তী রায় দিল হাই কোর্ট।
এদিন প্রথম পর্বে শুনানি চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি মন্তব্য করেন, “সরকার ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু আমরা যথেচ্ছ ক্ষমতা ব্যবহার করতে দিতে পারি না।” এদিন শুনানির শুরুতে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের অবস্থান জানান অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তার জেরেই এই মামলার রায় পিছোল। দ্বিতীয় পর্বে শুনানির পরই সেই রায়দান হবে। তার আগে সরকারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে তাদের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে ডিভিশন বেঞ্চ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, “সরকার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু আমরা যথেচ্ছ ক্ষমতার ব্যবহার করতে দিতে পারি না।” এর পরই অ্যাডভোকেট জেনারেল পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি শুধু।” সেই যুক্তি খারিজ করে হাই কোর্ট বলে, “নিয়ন্ত্রণ করা ও নিষেধাজ্ঞায় পার্থক্য আছে।” তাদের বক্তব্য, “কোথাও কোনও বিক্ষোভ বা হিংসা নেই। কীসের ভিত্তিতে আশঙ্কা করছে সরকার, কীসের ভিত্তিতে এই বিজ্ঞপ্তি, আগে তা স্পষ্ট করুক।” সরকার পক্ষকে বেঞ্চের পাল্টা যুক্তি, “প্রথমেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারি না। এগোতে হবে ধাপে ধাপে।”
এর পর অ্যাডভোকেট জেনারেল নিজেদের যুক্তিতে বলেন, “আমরা তো চারদিন বিসর্জন করতে দিচ্ছি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?” বাদানুবাদ তীব্র হয়। নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ বলে, “ক্ষমতা থাকলেই অপব্যবহার করতে পারি না। একে একে পদক্ষেপ করতে পারতেন।” বিচারপতির স্পষ্ট মন্তব্য, “কোথাও কোনও জমায়েত হলে আগে জলকামান ব্যবহার করা উচিত। তার পর প্রয়োজনে মৃদু লাঠিচার্জ করা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথমেই গুলি চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমেই শেষ ধাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। উৎসবকে নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে উৎসবমুখী মানুষকে।” রায় নিয়ে হাই কোর্টের দিকে নজর ছিল সবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.