Advertisement
Advertisement
Mamata Banerjee

‘বাংলার স্বার্থ আপস নয়’, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ফের তোপ মমতার

ডিভিসিকেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

WB CM Mamata Banerjee slams central government over Teesta water project
Published by: Sayani Sen
  • Posted:July 29, 2024 4:07 pm
  • Updated:July 29, 2024 4:07 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠরোধের চেষ্টার অভিযোগে উত্তাল বিধানসভা। তারই মাঝে অধিবেশনে যোগ মুখ্যমন্ত্রীর। ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন এবং বাংলার জলবণ্টন নীতি নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলার একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বলেন, “বাংলা নদীমাতৃক দেশ। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। তাদের সবটাই আমাদের সঙ্গে। তাদের জল আমাদের মধ্যে এসে পড়ে। নৌকোর মতো আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিধানসভার একটা প্রতিনিধি দল সেচ মন্ত্রকের সঙ্গে দেখা করে আসুন। আমি নিজে বলে এসেছি। দিল্লি থেকে ১৬০টা দল পাঠিয়েছে। অথচ ১০০ দিনের কাজে টাকা দেয়নি। মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে আগে দল গিয়েছিল। আবার একটা দল যাক।” শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে এই প্রস্তাবের কপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন মমতা। বন্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। বলেন, “আমি মনে করি বাংলা, বিশেষ করে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বন্যার কবলে চলে যায়। এটা যেন রুটিন হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ প্রত্যেকবার সহ্য করে নিচ্ছে। ১৫ বছর ধরে কেন্দ্র বাংলার শেয়ার নেয়। কিন্তু তাকিয়ে দেখে না। বাঁকুড়া, নদিয়া, হুগলি জলে ভেসে যায়। এটা কেন্দ্রের বিষয়ে। তাদের দেখা উচিত। আর বিজেপি আসার পর থেকে এরা সব বন্ধ করে দিয়েছে। ডিভিসি কোনওদিন বলে না জল ছাড়ার আগে। আমি বহুবার লিখেছি। নীতি অযোগে এবার বলে এসেছি। আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে ফরাক্কা, তিস্তার ব্যাপারে অনেক চিঠি দিয়েছি। আমার চিঠিগুলো জমা করলাম। এবারও আমরা টাকা পাইনি। আমাদের প্রতিবেশীরা পেয়েছেন। আমার আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলা কেন বঞ্চিত আমি জানতে চাই।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই’, বাংলা ভাগ ইস্যুতে বিধানসভায় স্লোগান বাঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী]

তিনি আরও বলেন, “ডিভিসি ৩ লক্ষ মেট্রিক টন জল ধরতে পারে যদি ড্রেজিং করে। করে না সেসব। জল বাড়তে থাকলে ১০ কিউসেক করে ছাড়ো। না করে ১০০ কিউসেক একেবারে ছেড়ে দেয়। আমি কিছু চেক ড্যাম করেছি। পুকুর কাটিয়েছি জল ধরো, জল ভরো প্রকল্পে। তাতে কিছু সুরাহা হয়েছে। ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকার লোয়ার দামোদর একটা প্রকল্প নিয়েছি। তবে ডিভিসির সংরক্ষণের ক্ষমতা না বাড়ালে উপকার হবে না। আমাদের দাবি পাঞ্চেত, মাইথনে ড্রেজিং হোক। আমি তো শুনছি ডিভিসি বেসরকারিকরণের চেষ্টা করছে। দেশটাকে কোনওদিন বেসরকারি করে দেবে। চিন্তা হয়। গোসাবা ছড়িয়ে সুন্দরবনের অনেকটা ক্ষতির মুখে। কপিলমুনির আশ্রমেরও ক্ষতি আটকানো যাচ্ছে না। সুন্দরবন নিয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান করা উচিত আগেই বলেছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কবে থেকে ঝুলছে। এটার অফিস চলে গিয়েছে বিহারে। এটা নিয়ে আমাদের ডিপিআর হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক হাজার কোটি খরচ হবে। দু-তিন বছর লাগবে। তবে আশপাশের মানুষ উপকৃত হবে। গঙ্গাসাগর মেলা এক টাকাও পায় না। আমাদের খরচ করতে হয়। কেন্দ্র কিছু করে না। মুড়িগঙ্গার উপর একটা ব্রিজ হবে। ডিপিআর হয়ে গিয়েছে। এক হাজার কোটির উপর খরচ হবে। কেন্দ্রের বৈষম্যের পরও আমরা চেষ্টা করছি। রাজ্যে কোনও বিপর্যয় হলে কেন্দ্র ম্যানেজমেন্ট টিম পাঠায়, তার জন্য আমাদের করা চুক্তি রয়েছে। কেন্দ্র দয়া করে না। আমাদের খরচ করতে হয়। ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা খরচ করেছি উত্তরবঙ্গের জন্য। আর ওরা বলে কিছু হয় না।”

বৈষম্যের অভিযোগ তুলে কটাক্ষের সুরে কেন্দ্রকে কুর্নিশ জানান মমতা। বলেন, “তিস্তা, সংকোশে বন্যা হয়। অথচ এটা রাজ্যের নদী নয়। বাইরের জন্য আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উত্তরবঙ্গ ভোগান্তির শিকার হয়। কেন্দ্রের তরফে কোনও তথ্য দেয় না। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, বুলবুল এলে আমরা মানুষকে সতর্ক করি। ভুটানের বাঁধগুলো হঠাৎ জল বাড়ে। খনন হয় না। দুকূল ছাপিয়ে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একের পর এক কৃষি জমি, চা বাগান নষ্ট হচ্ছে। বন্যপ্রাণী, মানুষ মারা যাচ্ছে। রাজ্যের তাতে কিছু করার থাকে না। কেন্দ্র সাহায্য করে না আমাদের। স্যালুট টু বিজেপি গভর্মেন্ট ফর দিস ডিসক্রিমিনেশন।” এর পর মমতার কথায় উঠে আসে তিস্তা প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “তিস্তায় জল আছে? ১৪ টা হাইডেল পাওয়ার পাম্প আছে। কালিম্পং, আপার শিলিগুড়ি যখন ভেসে যায় তখন কি কেন্দ্র চোখ বন্ধ করে বসেছিল। আগেই সিকিম তিস্তার অনেক জল নিয়ে নিয়েছে। তাতে জল কমে গিয়েছে। গাছ কাটা হল। তখনই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। এখন আবার বাংলাদেশ? ওরা আমাদের ভাইবোনের মতো, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওদের আমরা ভালোবাসি। কিন্তু জল দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভুগবে। ইউনিল্যাটেরালি একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আমরা বলছি বলেই উত্তরবঙ্গ ভাগ করে দাও। এত সস্তা? গায়ের জোর? বাংলাকে দেবেন না কিছু! আর যা ইচ্ছে করবে। কথা ছিল তিস্তার জলবণ্টনের জন্য যা ক্ষতি হবে কেন্দ্র-রাজ্যকে দেবে। এক পয়সা দেয়নি। ফরাক্কার উপর বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু বাংলার স্বার্থ আপস করে আমি কোনও চুক্তিতে যেতে পারব না। কে আমায় ভোট দিল, দিল না আমি জানি না। সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থাকবে। সেখান থেকেই এই কাজ আমি করব। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কেন্দ্র এই নিয়ে কথা তুলল কী করে? আমার নাকের ডগা দিয়ে জল কেটে নিয়ে যাবে আর আমি নাকের জল চোখের জলে এক হব? আমি মানব না।”

ফরাক্কার ভাঙন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ফরাক্কার ভাঙনে ২০০৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। এটা চিন্তার নয়? অথচ নির্লিপ্তভাবে কেন্দ্র বসে আছে। চোখ নেই, কান নেই, নিধিরাম সর্দার। আবার বাংলাকে বাদ দিয়ে চুক্তি হচ্ছে। আগে কিন্তু জ্যোতিবাবুকে ডেকে পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। এখন আর সেসব হয় না। উলটে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ কোর্ট। এখন ১২০ কিলোমিটার স্ট্রিমে কাজ করত। সেটাকে কমিয়ে ১২ কিমিতে নামিয়ে এনেছে। ওদের যেটা করার কথা সেটাও করে না। বাংলাকে বঞ্চিত করছে আবার নিজেদের কাজও করছে না। ধুলিয়ান, সামসেরগঞ্জ এর নানা এলাকা ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে। আমি দাবি করব ফরাক্কার জন্য যে কাজ করার কথা ছিল ১২০ কিমি চুক্তিকে কাজ করে। এটা আগে করুক। তার পর নবীকরণ হলে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলা উচিত।”

[আরও পড়ুন: ‘আপনাকেই চাই না’, ‘সংখ্যালঘু’ মন্তব্য নিয়ে বিধানসভায় শুভেন্দুকে তোপ মমতার]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement