কৃষ্ণকুমার দাস: প্রায় দু’সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল বালিগঞ্জ ও আসানসোলে উপনির্বাচনের (WB By-election) প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে রাজ্য শীর্ষ নেতাদের একাংশ ঘুরতে শুরু করেছে। কিন্তু দলের দুই তারকা প্রচারক দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে (Locket Chatterjee) এখনও দেখা যায়নি। উলটে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আচরণে দিলীপ ও লকেটরা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি তাঁরা বলেছেন, উপনির্বাচনে দুই কেন্দ্রেই গোহারা হারুক বিজেপি। অবশ্য শুধু এই দুই সাংসদ ছাড়াও বুধবার পর্যন্ত প্রচারে নামেননি দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু ও রীতেশ তিওয়ারির মতো গেরুয়া নেতারা।
দিলীপ-লকেটরা প্রকাশ্যে এই মন্তব্য না করলেও অন্দরমহলের খবর, ক্ষুব্ধ ওই তিন আদি বিজেপির (BJP) নেতাও মনেপ্রাণে চাইছেন, বড় মার্জিনে পদ্ম প্রতীকের দুই প্রার্থী হেরে যান। দুই গেরুয়া প্রার্থীদের প্রচার নিয়ে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিচিত্র আচরণে প্রচণ্ড হতাশ বালিগঞ্জ(Ballygaung) বিধানসভা ও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের আদি বিজেপির কর্মীরাও। অভিযোগ, দলে নব্য ও তৎকাল বিজেপির হাতেগোনা দু’ চারজন নেতা ছাড়া কাউকে কিছু জানাচ্ছেন না। এমনকী প্রার্থীদেরও অধিকাংশ তথ্য জানতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বালিগঞ্জের প্রার্থীর রোড-শো’তে লরিতে ওঠার আগে বুধবার এক বিজেপি কর্মী স্বীকার করেন, “উপনির্বাচনে কলকাতার এই কেন্দ্রে তৃতীয় ও আসানসোলে দ্বিতীয় স্থান পাওয়ার জন্য আমরা লড়াই করছি।”
বিগত লোকসভা ভোটে যাঁর হাত ধরে বিজেপি বাংলায় ১৮টি আসন পেয়েছিল, সেই দিলীপ ঘোষকে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভুলে গেল রাজ্য বিজেপি। এদিন বিজেপির ৪২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলের ফেসবুকে যে পোস্টার দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থাকলেও উল্লেখযোগ্যভাবে দিলীপবাবু অনুপস্থিত। দিনটি পালনে যে কর্মসূচি হয়েছে, সেখানেও ব্রাত্য ছিলেন দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা। উলটে দিনকয়েক আগে কমিটির বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়, দিলীপ-ঘনিষ্ঠ কারা কোন পদে এবং দায়িত্বে আছেন? প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘনিষ্ঠদের তালিকা বানিয়ে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ আদি বিজেপি কর্মীরাও তাই মনেপ্রাণে চাইছেন উপনির্বাচনে গোহারা হারুন পদ্ম প্রতীকের প্রার্থীরা।
শোনা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে ফিরে বালিগঞ্জ ও আসানসোলে (Asansol) নমো নমো করে দু’টি প্রচার করে দিল্লি ফিরে যাবেন দিলীপ ঘোষ। আর ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যে ফিরছেন না দিনকয়েক আগে উত্তরাখণ্ডে বিজেপির জয়ের অন্যতম কারিগর লকেট। হুগলির গেরুয়া সাংসদের ঘনিষ্ঠরা এদিন জানান, মহিলা মোর্চার সংগঠন মজবুত করার পরই যিনি দিদিকে সরিয়ে চেয়ারে বসেছিলেন, সেই অগ্নিমিত্রা আসানসোলে এবার প্রার্থী। তাই শিল্পনগরীর উপনির্বাচনে এদিন পদ্মপ্রার্থীর পরাজয় কামনা করেন লকেট অনুগামীরা। দিলীপের দুই সেনাপতি সায়ন্তন বসু ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনেই এখন রাজ্যের সংগঠনে ব্রাত্য। উপনির্বাচনের তারকা প্রচারকের তালিকায় নাম নেই রাজুর। পদাধিকারী দূরের কথা, নয়া কর্মসমিতি থেকেও বাদ পড়েছেন সায়ন্তন বসু। ভোট প্রচার থেকে দূরে থাকা এই দু’জনেই চাইছেন উপনির্বাচনে দুই বিজেপি প্রার্থী গোহারা হলে উচিত শিক্ষা পাবে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.