স্টাফ রিপোর্টার: নিচুতলায় সংগঠনে দুর্বলতা প্রকট। দলের মধ্য়ে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চলছে। এই ডামাডোলের মধ্য়েই আজ, বুধবার ধর্মতলায় অমিত শাহর সভায় লোক ভরাতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে আজ শাহর এই সভা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এক, বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে হেরে কর্মীদের মনোবল তলানিতে। দলের মধ্য়েও চলছে গৃহযুদ্ধ। ফলে অমিত শাহর এই সভার মধ্য়ে দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপির নেতারা। দুই, শক্তি প্রদর্শন করে, কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় ট্রেন ভাড়া নিয়ে ও স্পেশাল ট্রেন চালিয়ে লোক আনতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়েছেন নেতারা। ঠিক ন’বছর আগে এই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের সভামঞ্চ থেকেই বাংলা থেকে তৃণমূল সরকারকে উপড়ে ফেলার হুঙ্কার দিয়েছিলেন অমিত শাহ। তার পরও দু-দুটো বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কার্যত দুরমুশ করে রাজ্য়ে ক্ষমতায় রয়েছে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। আর ন’বছর পর আজ ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ কী বার্তা দেন সেদিকে নজর রাজ্য বিজেপির নেতা-কর্মীদের। চব্বিশের লোকসভা ভোটের দামামাও ধর্মতলার সভা থেকেই যে বাজিয়ে যাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই যেনতেন প্রকারে এই সভায় লোক জড়ো করতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি। ট্রেন-বাস ভাড়া-সহ অন্য খরচ মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এই সভাকে সফল করার জন্য।
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে আটটি ট্রেন বুধবার সকালেই কর্মী-সমর্থক নিয়ে শিয়ালদহ ও হাওড়ায় এসে পৌঁছায়। আবার দুই ২৪ পরগনা থেকে লোক আনতে শিয়ালদহ ডিভিশনে স্পেশাল লোকাল ট্রেনও দেওয়া হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের সভায় লোক আনতে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা কার্যত নজিরবিহীন। মঙ্গলবার রাতেই বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক কলকাতায় চলে এসেছেন। শিয়ালদহ ও হাওড়ায় লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। কোথাও ভাত-ডাল-সবজি দিয়ে নিরামিষ খাবার, কোথাও আবার ডিম-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া হাউসের ঠিক সামনে লোহার পিলার দিয়ে ৬০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া ত্রিস্তরীয় মঞ্চ করা হয়েছে। মাটি থেকে মঞ্চের উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মঞ্চের একটি জায়গায় বসবেন অমিত শাহ-সহ সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। একটি জায়গায় দলের সাংসদ-বিধায়ক ও রাজ্য নেতারা থাকবেন। আরেকটি জায়গায় কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিতদের কয়েকজনকে রাখা হবে। এদিকে, রাজ্য বা কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বঞ্চিতদের এই সমাবেশের জন্য মঙ্গলবার একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করেছে বিজেপি। গান লিখেছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ। অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল ছাড়াও শঙ্কুদেব পণ্ডা, ইন্দ্রনীল খান-সহ বিজেপি নেতানেত্রীরা। গান আর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় দিয়েছে বিজেপি।
এই ভিডিওর গান নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে তরজা শুরু হয়েছে বিজেপির। গণসঙ্গীত বামেদের থেকে টোকা বলে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। সুজনের কথায়, ‘‘নতুন সৃষ্টি, সংগ্রাম-সংস্কৃতিতে বামপন্থীরা অগ্রগণ্য। সেই ধারণাকেও বিজেপিকে টুকতে হচ্ছে।’’ পালটা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘বামেদের কাজ নেই। ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। গুঁতোগুঁতি করছে।’’
এদিন ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে কলকাতায় আসবেন শাহ। বেলা সওয়া ১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর পৌঁছনোর কথা। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে রেসকোর্স। তারপর গাড়িতে আসবেন ধর্মতলার সভাস্থলে। পৌনে ২টো থেকে সওয়া ৩টে পর্যন্ত সভামঞ্চে তাঁর থাকার কথা। তারপর আবার একইভাবে কলকাতা বিমানবন্দর এবং সেখান থেকে ৪টে নাগাদ বিমানে দিল্লি উড়ে যাবেন। মঙ্গলবার সভাস্থলে ঘুরে প্রস্তুতি দেখে যান সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্ত, শিশির বাজোরিয়া, অগ্নিমিত্রা পল-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। দফায় দফায় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিটিং করেছেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, দীপাঞ্জন গুহরা। প্রায় দশটা জায়ান্ট স্ক্রিন থাকছে। ক্যামেরা থাকছে সাতটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.