কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: মিছিলটা সকালবেলাতে ঢুকতে পারে এমন একটা খবর ছিল লিয়াকতের কাছে। সকাল আটটা থেকে চায়ের দোকানে স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন রাজারহাটের (Rajarhat) লস্করহাটি গ্রামের লিয়াকত মোল্লা। মিছিল লস্করহাটিতে ঢুকল শনিবার সকাল দশটা নাগাদ। সময়টা আগে জানতে পারেননি বলে মেয়েকে ১৭ বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে দু’ঘণ্টা ঠায় বসে থাকতে হয়েছে লিয়াকতের স্ত্রীকে।
মেয়ে জিয়াসমিন খাতুন। এবার ১৭ বছরে পা দিল। জন্ম থেকে বিশেষভাব সক্ষম। উচ্চতা সাড়ে তিনফুট। ওজন ১৮ কিলোর একটু কম। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। কথা বলতে পারে না। ঠিক করে খেতেও পারে না। চটকে চটকে প্রায় তরল করে গলা ভাত খাইয়ে দেন মা। দিনে একাধিকবার থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায়। টাকাপয়সা নেই বলে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় পরে রয়েছে বাড়িতে। তার চিকিৎসার টাকার বন্দোবস্ত করতে প্রার্থীর জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন রাস্তায়। দশটা নাগাদ মানুষে ঠাসা মিছিলটায় ভিড় ঠেলে কোনওরকমে ঢুকে পরেন লিয়াকত। রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যেতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি। মেয়েকে কোলে নিয়ে তাঁর স্ত্রীও আরজি নিয়ে দরবার করেন তাপসবাবুর কাছে। মেয়েটির অসুস্থতার কথা পুরোটা শুনে তাপসবাবুর বক্তব্য, “ক’টা দিন অপেক্ষা করুন। ভোটটা মিটে যাক। জিতি বা হারি বাচ্চাটির জন্য অবশ্যই যা করার তাই করব। নিশ্চিত থাকুন”
লিয়াকত বাড়ি ফেরার পর বলেছেন,“শুনেছিলাম তাপসদার কাছে গেলে খালি হাতে ফিরতে হয়নি। আজ নিজের কানে শুনলাম। আশাকরি, মেয়েটাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না।” জিয়াসমিনের জন্য মাসে কম করে ৬০০ টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। স্থানীয় একটি সেলুনের কর্মচারি লিয়াকতের পক্ষে সে টাকা জোগার করা কষ্টকর। তবুও তা তিনি করে যাচ্ছিলেন এতদিন। সর্বনাশ ডেকে আনে লকডাউন। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম সেলুনটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওষুধ কেনার টাকাও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মধ্যবয়স্ক এই ব্যক্তি।
জিয়াসমিন জন্ম থেকেই বিশেষভাবেই সক্ষম। ছ’মাস বয়সে তাকে ফুলবাগানে শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে এসএসকেএম-এ। চিকিৎসা চলছিল কোনওমতে। জিয়াসমিনের বয়স যখন ছ’বছর তখন উত্তর কতকাতার একটি প্রতিবন্ধী হাসপাতালে ভরতি করা কথা হয়েছিল। লিয়াকত জানিয়েছিলেন, প্রায় বছর খানেকের জন্য ভরতি রাখার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতাল বিপিএল কার্ড দেখাতে বলেছিল। সেই সময় দোরে দোরে ঘুরেও সে কার্ড জোগার করে ওঠা সম্ভব হয়নি এই সেলুন কর্মচারির। ফলে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় তখন থেকে বাড়িতেই পরে থাকছে মেয়ে। এদিন তার জন্য কিছু একটা ব্যবস্থার আশ্বাস পেয়ে ভিজে ওঠে বাবার চোখের কোণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.