কৃষ্ণকুমার দাস: করোনাকালে (Corona Virus) সাংবিধানিক সংকট এড়াতে বিধায়কদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাজ্য বিধানসভার (Assembly) সংক্ষিপ্ত অধিবেশন বসছে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই। মাত্র দু’দিনের জন্য প্রস্তাবিত অধিবেশনে কোভিডের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সদস্যদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সোমবারই বিধানসভার সচিব ও মার্শালকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষ ও গ্যালারি-সহ সমস্ত ব্যবস্থা সরজমিনে পরিদর্শন করে চূড়ান্ত করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক বিধায়কদের সবাইকেই অধিবেশন কক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই বসবেন। কমবয়সী বিধায়কদের গ্যালারিতে বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, পরিষদীয় নেতা এবং বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ, ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা অধিবেশন কক্ষেই বসবেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন,“সংসদীয় বিষয়ক দপ্তর থেকে চিঠি পেলে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। প্রথা মেনে বর্ষাকালীন অধিবেশন বসার কথা থাকলেও পরিস্থিতির জেরে তা হবে সংক্ষিপ্ত। বিধানসভার সদস্য থেকে সংবাদ মাধ্যম, সবাইকে করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিধানসভায় আসতে হবে।” বিধানসভা সূত্রে খবর, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার সংক্ষিপ্ত অধিবেশন শুরুর সম্ভবনা রয়েছে।
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে অন্তত একবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে হয়। এর আগে রাজ্যপালকে দোষারোপ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য গত ১৭ মার্চ অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছিল। পরিষদীয় অঙ্ক মেনে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অধিবেশন ডাকতেই হবে এবং এক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। তাই এদিন থেকেই বিধানসভাভবনে স্পিকারের দপ্তরে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কারণ, অন্য যে কোনও বছরের তুলনায় এবার করোনাকালের নানা গাইডলাইন মেনে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন চালাতে হবে। অধিবেশনে বিধায়কদের আসা-যাওয়া ও বসার ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে। এদিন স্পিকার জানিয়েছেন, “বিধানসভা কক্ষে ঢোকার মুখে যেমন স্যানিটাইজার দেওয়া হবে, তেমনই সমস্ত সদস্য, অফিসার ও কর্মীদেরও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।” দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে পরিষদীয় প্রথা মেনে সর্বদলীয় বৈঠক এবং বিএ কমিটির মিটিংয়ের দিন ঠিক করবেন স্পিকার। বিরোধী দলের নেতারা ঠিক করবেন, দলের কোনও বিধায়ক নিচে অধিবেশন কক্ষে এবং কারা উপরের দর্শক গ্যালারিতে বসবেন। এই অধিবেশনে কোনও সাধারণ দর্শক প্রবেশের অনুমতি থাকছে না।
বিধানসভা সূত্রে খবর, দূরত্ববিধি মানার কারণে এই প্রথম অধিবেশন কক্ষের দোতলায় দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট যে গ্যালারি রয়েছে সেখানে কিছু বিধায়ককে বসাতে হবে। বিধায়কদের বসার জন্য নির্দিষ্ট ৩০০টি আসন ছাড়াও পিছনে যে আটটি গ্যালারি আছে তার পাঁচটিতে সদস্যদের বসানোর ভাবনা শুরু হয়েছে। ওই নির্দিষ্ট পাঁচটি গ্যালারিতে এতদিন সংবাদমাধ্যম বসত। কিন্তু এবার করোনার জেরে দূরত্ব মেনে বিধায়কদের ওই গ্যালারিতে বসিয়ে সংবাদমাধ্যমকে উপরে দর্শক গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, অধিবেশন কক্ষে যদি একটি চেয়ার ব্যবধান রেখেও বসার ব্যবস্থা করা হয় তবে মাত্র অর্ধেক বিধায়ককে বসতে দেওয়া যাবে। স্বভাবতই অবশিষ্ট বিধায়কদের জন্য দোতলার দর্শক গ্যালারিকে বসতেই হচ্ছে। প্রতিবছর অধিবেশন চলার সময় বিধানসভা ভবনেই পিজি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার ও অ্যাম্বুল্যান্স এবং ওষুধপত্রের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এবার সেই সমস্ত ব্যবস্থার সঙ্গে বেশি সংখ্যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ও থার্মাল গানের ব্যবস্থা থাকছে। বিধানসভা ভবনে ঢোকার সময়েই বিধায়ক, কর্মী, পুলিশ ও সংবাদমাধ্যম, সবাইকেই থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষা করেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.