বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ভোটে স্রেফ ভরাডুবিই নয়। যাকে বলে, বিপর্যয় হয়েছে। আর এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে বসে কার্যত মাছ বাজারের পরিবেশ তৈরি হল বামফ্রন্টের (Left Front) বৈঠক। বড় শরিক সিপিএমকে (CPM) কাঠগড়ায় দাঁড় করাল শরিকরা। তাদের গুরুত্ব না দিয়ে একতরফাভাবে আইএসএফের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলেই এই বিপর্যয় বলে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের দিকে আঙুল তুলেছেন শরিক নেতারা। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, কার্যত তাদের অন্ধকারে রেখে এই জোট হয়েছে। তাদের বরাদ্দ আসন আইএসএফকে দেওয়া হয়েছে। তেমনই অন্যান্য শরিকের আসনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একের পর এক তিরে বিদ্ধ হলেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা।
আইএসএফের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের (Left-Congress) জোট মানুষ ভালভাবে নেয়নি। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। তাই যেখানে আব্বাস সিদ্দিকির দলের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, সেখানে অন্তত ধর্মনিরপেক্ষ জনতার ভোট পায়নি জোট। সেই ভোট শাসকদলের দিকে চলে গিয়েছে। একই অভিযোগ আরেক শরিক আরএসপির (RSP)। তাদের বক্তব্য, কলকাতা এবং আশপাশের এলাকায় তাদের কোনও আসন দেওয়া হয়নি। নিশ্চিত পরাজয় হবে বেছে বেছে এমন আসনই তাদের দেওয়া হয়েছে।
আরএসপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ দিনাজপুরে গত বিধানসভার তুলনায় অন্তত ২৭ শতাংশ ভোট কমেছে বামেদের। এর জন্য সংযুক্ত মোর্চার নীতিকেই দায়ী করলেন বাম নেতা তথা আরএসপির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, তপন এবং কুশমন্ডিতে বরাবরের মত এবারও প্রার্থী দিয়েছিল বামদল আরএসপি। গঙ্গারামপুর এবং হরিরামপুর থেকে প্রার্থী দেয় সিপিএম। কুমারগঞ্জ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কংগ্রেসকে। এবার জেলায় বামেরা (আরএসপি, সিপিএম) ভোট পেয়েছে মাত্র ৭.৪১ শতাংশ। অথচ গত ২০১৬ বিধানসভাতে এই জেলায় বামেদের ভোট ছিল ৩৪.৭ শতাংশ।
পাশাপাশি বৃহস্পতিবার শরিক দলগুলোর তরফে নাম করেই বলা হয়েছে, মহম্মদ সেলিম, তন্ময় ভট্টাচার্য ভোটের আগে বা ভোটের পরে যে ভূমিকা পালন করছেন, মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তা দলবিরোধীও। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে শরিক দলগুলি। এদিনের বৈঠকে রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেন অসুস্থ বিমান বসু। পরে তিনি জানান, এই যে বিপর্যয় তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রত্যেকটি দল আলাদা আলাদা করে পর্যালোচনা করুক এবং তারপর রিপোর্ট জমা দিক। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
এছাড়াও বৈঠকে ঠিক হয়েছে নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর যেভাবে বামপন্থীদের উপর অত্যাচার চলছে এবং কার্যালয়গুলির উপর যে হামলা চলছে, তা নিয়ে প্রতিটি জেলায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের ডেপুটেশন দিতে হবে এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.