নিরুফা খাতুন: চিড়িয়াখানায় ভ্রমণ করতে গিয়ে যদি খাঁচার ভিতর ঢুকতে পারা যায়, তাহলে কেমন হবে? দর্শকদের এবার সেই সুযোগই করে দিতে চলেছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। শীতের মরশুমে দর্শকদের জন্য থাকছে নয়া চমক। তবে বাঘ বা সিংহের খাঁচায় নয়, পাখির খাঁচায় ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
সেজন্য চিড়িয়াখানায় করা হয়েছে বিশালাকার একটি খাঁচা। যেখানে হরেক প্রজাতির পাখি থাকবে। খাঁচায় ঢুকে তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে পারবেন দর্শকরা। আলিপুর চিড়িয়াখানা (Alipore Zoo) দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে দর্শকদের এই উপহার দিতে চলেছে। চলতি মাসে দর্শকদের জন্য এই খাঁচা খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর। পাশাপাশি শীতের মরশুমে আলিপুরে আসছে নয়া অতিথি। শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি থেকে আসছে একটি চিতা-বিড়াল (লেপার্ড ক্যাট)। এই প্রথম আলিপুরে আসছে চিতা-বিড়াল। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তাকে নিতে আলিপুর থেকে প্রতিনিধিরা উত্তরবঙ্গে রওনা দেবেন বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ভিনরাজ্যে এরকম অনেক চিড়িয়াখানা রয়েছে যেখানে পশুপাখিদের খাঁচায় প্রবেশের অনুমতি রয়েছে দর্শকদের। কিন্তু এ রাজ্যে এমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এই প্রথম আলিপুর চিড়িয়াখানা দর্শকদের খাঁচায় প্রবেশের ছাড়পত্র দিচ্ছে। বিশালাকার কাচে মোড়া সেই খাঁচা। সেখানে দর্শকদের হেঁটে ঘোরার জন্য থাকছে ওয়াকিং ওয়ে। প্রায় ১২ প্রজাতির পাখি থাকছে। জলজ পাখি রাখা হচ্ছে। সেজন্য খাঁচার মধ্যে রয়েছে জলাশয়। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, আলিপুর চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দেড়শো বছর পূর্তিতে প্রবেশ পথে নতুন ফটক উদ্বোধন করা হয়েছে। এবার দর্শকদের জন্য খাঁচায় প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পাখিদের একটি নতুন খাঁচা তৈরি হয়েছে। সেখানে দর্শকরা প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তাদের ছুঁতে পারবেন না। কাচে মোড়া সেই খাঁচার ভিতরে পাখিদের সঙ্গে ছবি তুলতে পারবেন দর্শকরা। সেখানে চাইলে বসে একটু বিশ্রাম করে নিতে পারবেন। সেজন্য খাঁচার ভিতরে চেয়ার রাখা হয়েছে।
আলিপুরে সদস্য সংখ্যা কম নয়। বাঘ, সিংহ, জলহস্তী এরা পুরনো সদস্য। তবে চিতা-বিড়াল কখনও ছিল না। দর্শকদের জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দেশ-বিদেশ থেকে নয়া নয়া সদস্যের খোঁজ করছে। পুজোর আগেই একগুচ্ছ অতিথি এসেছে আলিপুরে। পুজোর আগে নন্দনকানন থেকে বাঘ, সিংহ, হিমালয়ান ভল্লুক, জলহস্তী, মাউজ ডিয়ার, সোয়াম্প ডিয়াররা এসেছিল। বেঙ্গল সাফারি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল একজোড়া রয়্যাল বেঙ্গল ও টাপির। অন্ধপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে এসেছে সাদা বাঘিনী। এই শীতের মরশুমে আরও কয়েকটি অতিথি নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে চিতা-বিড়ালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আলিপুর কর্তৃপক্ষ।
অধিকর্তা জানান, এখানে চিতা-বিড়াল অতীতে ছিল না। এই প্রথম এখানে চিতা-বিড়াল আসছে। বেঙ্গল সাফারি থেকে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সেটি দর্শকরা দেখতে পাবেন। চিতা-বিড়াল (প্রায়োনেইলুরাস) হচ্ছে ফেলিডি পরিবারের। ছোট আকারের, বিড়ালের মতো একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। চিতাবাঘের মতো এদের গায়ের রং। তাই এদের চিতা-িবড়াল বলা হয়। বেঙ্গল সাফারিতে চিতা-বিড়ালের পরিবার রয়েছে। সেই পরিবারে এখন সদস্য সংখ্যা ছয়। যার মধ্যে তিনজন স্ত্রী ও তিনজন পুরুষ। গত মে মাসে সেখানে চিতা-বিড়াল দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু মায়ের গাফিলতিতে একটি শাবক জন্মের পরই মারা যায়। দ্বিতীয় সন্তানটিকে সাফারি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বাঁচিয়ে নিয়েছে। তবে আলিপুরের জন্য যেটি নিয়ে আসা হচ্ছে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা-বিড়াল।
আলিপুরে বছর কয়েক ধরে সবুজ অ্যানাকোন্ডা নিয়ে আসার কথা চলছে। মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাঙ্ক থেকে তাকে নিয়ে আসার কথা। পাশাপাশি ভিন দেশেও তার খোঁজ চালায় কর্তৃপক্ষ। এই মরশুমে হয়তো তাকে হাতে পেতে পারে কর্তৃপক্ষ। কারণ ইতিমধ্যে আলিপুরে তার ঘর গোছানো হয়ে গিয়েছে। তবে তাকে হাতে পেতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.