স্টাফ রিপোর্টার: জেলের অফিসার ও কর্মীরা সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, খাওয়া তো দূরের কথা, বন্দির কাছে ঘুমের ওষুধ ছিলই না। বারবার তল্লাশি হয়েছে, নজরদারি ছিল কড়া। অন্যদিকে, চিকিৎসক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের রিপোর্ট ও সাক্ষ্য, বন্দির পাকস্থলিতে পাওয়া গিয়েছে প্রচুর ঘুমের ওষুধের উপস্থিতি।
আত্মহত্যার চেষ্টায় ৩০৯ ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে যখন সংসদ থেকে আদালত পর্যন্ত বিতর্ক তুঙ্গে, তখনই এমন বৈপরীত্য ভরা একটি চাঞ্চল্যকর আত্মহত্যার চেষ্টার মামলায় রায় ঘোষিত হতে চলেছে আজ, শুক্রবার।
স্থান: বিধাননগরে সাংসদ, বিধায়কদের বিশেষ আদালত। বিচারক: মনোজ্যোতি ভট্টাচার্য। অভিযুক্ত: তৎকালীন সাংসদ কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) সেলে একটি কাণ্ড ঘটে। সারদা মামলায় (Sarada scam) বন্দি ছিলেন কুণাল। তার আগেই তিনি কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আসল সুবিধাভোগীরা ও ষড়যন্ত্রীরা গ্রেপ্তার না হলে তিনি আত্মহত্যা (Suicide) করবেন। পুলিশের অভিযোগ, ১৩ নভেম্বর রাতে তিনি বিপুল পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খান। এসএসকেএম (SSKM)হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁর স্টমাক-ওয়াশ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা করা হয়। হেস্টিংস থানা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। আদালতে শুনানি শেষ। সরকারি আইনজীবী আদালতে বলেছেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে পুলিশ। ফলে আদালত ৩০৯ ধারায় যথাযথ রায় দিন।
অন্যদিকে, কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী আদালতে বলেছেন, ‘‘উনি জেলে ছিলেন। সেখানে তাঁর উপর নজরদারি ছিল। সাক্ষীরা সবাই বলেছেন বারবার তল্লাশি হয়েছে। ঘুমের ওষুধ মেলেনি। উল্টে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন পেটে ওষুধ মেলা তিনি বলতে পারেন। কিন্তু সেটা নিজে খাওয়া নাকি কৌশলে খাইয়ে দেওয়া, সেটা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’’ খোদ অভিযুক্তকে বিচারক প্রশ্ন করলে তিনি ন্যায়বিচারের অভাবে রাগ, হতাশা এবং অবসাদের কথা বললেও রাতের ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘‘এত ডিসটার্বড ছিলাম যে নির্দিষ্টভাবে মনে নেই কিছু।’’
এই অবস্থায় আজ মামলার রায়দান। দোষী সাব্যস্ত হলে ৩০৯ ধারা অনুযায়ী সাজা সর্বোচ্চ দু’বছর পর্যন্ত কারাবাস অথবা জরিমানা। এখানেই মানবিকতার প্রশ্নে এই ধারা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক। লোকসভা ইতিমধ্যেই বলেছে ৩০৯ ধারা অবলুপ্ত হোক। বিচারবিভাগেও এনিয়ে বিস্তর জল্পনা। এই মামলাতেও কথাপ্রসঙ্গে অভিযুক্তের আইনজীবীর সওয়াল ছিল, যিনি নিজেকে শেষ করতে চান, তাঁর মধ্যে যন্ত্রণা থাকে। শাস্তি নয়, তাঁর দরকার কাউন্সেলিং, চিকিৎসা, সমবেদনা। ৩০৯ ধারা মানবিকতার পরিপন্থী। অন্যদিকে, ধারা অনুযায়ী এটা অপরাধ। বেঁচে থাকার অধিকারের পরিপন্থী। তাই শাস্তিযোগ্য। লোকসভা অবলুপ্তি বললেও যতক্ষণ আইনের ধারাটি কার্যকর আছে, ততক্ষণ বিচার এই ধারাতেই। ফলে স্পর্শকাতর বিষয়ে বিচারকের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।
আজ কুণাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টার মামলায় রায় দিতে চলেছেন বিচারক। যেহেতু এই ধারা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে, তাই বিচারক মনোজ্যোতি ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও রায়ের দিকে নজর থাকছে সংশ্লিষ্ট সব মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.