শুভময় মণ্ডল : সাত দফা ভোটের মাঝেই একটি ঘটনা আচমকাই হয়ে উঠল ভোটের ইস্যু৷ সপ্তম তথা শেষ দফার ঠিক আগে৷ ১৪ মে, সন্ধে৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ শহরে এসেছিলেন শেষ দফার ভোটের প্রচারে৷ কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে তাঁর অন্যতম কর্মসূচি ছিল রোড শো৷ সেখানেই ঘটে গিয়েছিল অপ্রীতিকর ঘটনা৷ যা পরবর্তী সময়ে ভোটের ইস্যু হয়ে দাঁড়াল৷
বিজেপির রোড শো থেকে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ এবং বিদ্যাসাগর কলেজে ঐতিহ্যবাহী মনীষীর মূর্তি ভাঙচুর৷১৯ মে, রাজ্যের ৯ কেন্দ্রে শেষ দফা ভোটের আগে এই নিয়েই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজনীতির ভিতর-বাহির৷ এর জেরে ভোটের প্রচারের সময়ও কমে গেল অন্তত ২০ ঘণ্টা। বাঙালি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল সংস্কৃতি-রক্ষায়। ভোটের প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছিল বিদ্যাসাগর। সেই উত্তরের কেন্দ্রেই তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট জয়ে তেমন বেগ পেতে হয়নি। বরং বেড়ে গেল গতবারের জয়ের ব্যবধান। অনেকটাই বাড়ালেন শতাংশের হিসাবে ভোট অঙ্কও।গতবারের ব্যবধান দ্বিগুণ করে নিয়েছেন, পেরিয়ে গিয়েছেন ২০০৯ সালের এক লক্ষ ৯ হাজারের মার্জিনও।
বিজেপি সারা দেশে জয়ের অনন্য নজির গড়লেও রাজ্যে তাঁদের সদর কার্যালয় যে কেন্দ্রে, সেই কেন্দ্রে পারল না ধারা অব্যাহত রাখতে। রাজনৈতিক মহল এই জয়ের কারণ হিসাবে বিদ্যাসাগরকে অন্যতম ইস্যু বলে মনে করছে। এছাড়াও সবস্তরের ও সম্প্রদায়ের মানুষের ভোট তিনি পেয়েছেন। সব সময়ে কাছে পাওয়া ‘সুদীপদাকে’ই আবার চেয়েছেন উত্তর কলকাতার মানুষ। তাঁর জনসংযোগ ও প্রত্যেকের সঙ্গে আন্তরিকতা তাঁকে এগিয়ে রেখেছিল। সেটাই ফ্যাক্টর হয়েছে শেষ পর্যন্ত। বাম ভোট তলানিতে গেলেও অসুবিধা হয়নি সুদীপের।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনাই একসঙ্গে রয়েছে। ১৪টি টেবিলে গণনা হয়েছে প্রায় সব বিধানসভার৷ প্রথম থেকেই এগিয়ে গিয়েছেন সুদীপ। তবে এন্টালি যেভাবে ব্যবধান বাড়িয়েছে, আর কোনও কেন্দ্রে তা হয়নি৷ জোড়াসাঁকোয় এগিয়ে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী। গোটা লোকসভা কেন্দ্রে গতবার ৯৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন সুদীপ। সেবারও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির রাহুল সিনহাই। সুদীপের শতাংশের হিসাবে ৩৫.৯৪। রাহুল পান ২৫.৮৮ শতাংশ। সিপিএমের রূপা বাগচী পেয়েছিলেন ২০.৫০ শতাংশ। কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন সোমেন মিত্র। যদিও ৪৮.৬৬ শতাংশ এবার সুদীপের। সিপিএমের কণীনিকা ঘোষ সন্ধে পর্যন্ত সাত শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন। কংগ্রেসের প্রার্থীর ভোট তিন শতাংশের মতো।
চৌরঙ্গি, জোড়াসাঁকো, এন্টালি, শ্যামপুকুর, বেলেঘাটা, মানিকতলা ও কাশীপুর-বেলগাছিয়ার সাতটি কেন্দ্র মিলিয়ে কলকাতা উত্তর। চৌরঙ্গির জন্য ছিলেন তৃণমূলের ইন্দ্রাণী সাহা বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরাজিতা দাশগুপ্ত, সঞ্চিতা মণ্ডলরা, এন্টালির ঘরে স্বপন সমাদ্দার, কাশীপুরে তরুণ সাহারা। জোড়াসাঁকোতে বিজেপির ঘর সামলেছেন মীনা দেবী পুরোহিতের মতো পুরনো বিজেপি নেত্রী।অনেকেই বলছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার আবেগ ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে৷ আর সেখানেই গুরুত্ব পেয়েছে এই ঘটনায় বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি রাজ্যের শাসকদল হিসেবে দায়বদ্ধতা, যা হেভিওয়েট সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটাই৷ তাছাড়া ফলাফলের দিকে একটু নজর রাখলেই দেখা যাচ্ছে, সপ্তম দফায় যে ৯ কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তার সব কটিই এসেছে তৃণমূলের দখলে৷সম্ভবত এখানেও কাজ করেছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার আবেগ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.