নতুন জামার গন্ধ। পুজোসংখ্যার পাতায় নয়া অভিযান। শরতের নীল-সাদা মেঘের ভেলায় পুজোর ছুটির চিঠি। ছোটবেলার পুজোর গায়ে এরকমই মিঠে স্মৃতির পরত। নস্ট্যালজিয়ার ঝাঁপি খুললেন জয় সেনগুপ্ত।
ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি বলতেই উত্তর কলকাতার পুজোর ছবি ভেসে ওঠে। আমার দাদুর বাড়ি ছিল ওখানে। হেদুয়ার কাছে বেশ কয়েকটা পুজো দেখতাম আমরা। সে সময় পুজোগুলো ছোট ছোট ছিল। ঘরোয়া মেজাজ। বেশিরভাগই বাড়ির পুজো। সাদামাটা। পুজোয় নতুন বেরনো গান বাজতো। শ্লোক-মন্ত্রপাঠ শোনা যেত। খাওয়া-দাওয়া, নতুন জামা পরা ইত্যাদি তো ছিলই। তবে খুব সিম্পল ছিল সে সময়ের পুজোগুলি।
[ আমার দুগ্গা: রাতে ঠাকুর পাহারা দেওয়া কে ভুলতে পারে! ]
এরপর ট্রান্সফার হয়ে বাবা দিল্লিতে চলে যায়। ফলত আমারও পুজো হয়ে উঠল প্রবাসীর পুজো। তবে চিত্তরঞ্জন পার্কে অসাধারণ পুজো হত। সে সময় দিল্লিতে যেরকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত, কলকাতাতেও সেরকম হত না। কেননা সমস্ত শিল্পীরা কলকাতা থেকে দিল্লিতে চলে যেতেন। অনেক ভাল ভাল নাটক হত। আবৃত্তি করতেন বড় বড় শিল্পীরা। আর ছিল চুটিয়ে বাংলা সিনেমা দেখা। পুজোর চারদিন সারারাত ধরে বাংলা ছবি দেখা হত। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদারের দারুণ দারুণ ছবি দেখানো হত। প্রায় কুড়িটা ছবি দেখতাম ওই ক’দিনে। বাংলা সিনেমা ভালবাসার শুরুটা এখানেই। পুজোর ওই ছবি দেখার পর্ব না থাকলে হয়তো বাংলা সিনেমাকে এভাবে চিনতাম না।
[ আমার দুগ্গা: মেয়েরা কখন আসবে দেখে সেই সময় মণ্ডপ যেতাম ]
এরপর বয়স আর একটু গড়াল। মানে টিন এজ পর্ব শুরু। তখন মহিলাদের প্রতি আমরা একটু ইন্টারেস্টেড হয়ে পড়লাম। নতুন জামাকাপড় পড়ে সকাল সকাল মণ্ডপে হাজির হয়ে যেতাম। কোন মেয়েরা অঞ্জলি দিতে আসছে সেদিকেই আমাদের চোখ ছিল। বাঙালি মেয়েরা এমনিতেই সুন্দরী, পুজোর চারদিন যেন আরও সুন্দরী হয়ে ওঠে। তবে মুশকিল হল, ওই চারদিন যে মেয়েদের দেখা যেত, পুজো ফুরলে তারা যে কোথাও উধাও হয়ে যেত, তার আর ঠিক নেই। আবার এক বছরের অপেক্ষা। পরের বছর হয়তো দেখা যেত তাদের কারও প্রেমিক সঙ্গে। ফলত পুজো মানে প্রতিবার প্রেমে পড়া আর প্রেম ভাঙা।
[ আমার দুগ্গা: অচেনা বাড়ির পুজোয় ঘরের ছেলে সেজে ঢুকে পড়তাম ]
মুম্বইতেও ভাল পুজো হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অবশ্য কলকাতার মতো জৌলুস নেই। তবে মুম্বইয়ের পুজোয় ভোগ খাওয়া দারুণ আনন্দের। মুখার্জি বাড়িতে আমরা ভোগ খেতে যাই। একদিন রানি মিষ্টি খাওয়ায়, অন্যদিন কাজল। তবে যাই হোক বড় হওয়ার পর পুজো অনেকটাই বদলে যায়। তবে ছোটবেলার পুজোর আমেজের কোনও তুলনা হয় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.