ছবি: প্রতীকী।
দীপঙ্কর মণ্ডল: করোনা আবহে প্রথমে ঠিক ছিল চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে না। আগের সেমিস্টারে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে মার্কশিট তৈরি হবে। বাদ সাধল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। বল গড়াল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতেই হবে। ইতিমধ্যে ঠিক হয়েছে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক-স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসেই পরীক্ষা দিতে পারবেন।
বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বৈঠক করেন। ১৫২টি কলেজের অধ্যক্ষ যোগ দেন ভারচুয়াল আলোচনায়। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার্থীদের জন্য অ্যাডমিট তৈরি হবে না। ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে ছাত্রছাত্রীরা সাদা কাগজে উত্তর লিখবেন। অ্যাডমিট না থাকায় রোল নম্বর থাকবে না। উত্তরপত্রের শুরুতে পড়ুয়াদের শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে হবে। প্রশ্ন পাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ই-মেলের মাধ্যমে উত্তরপত্রের ছবি তুলে বা স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। ইন্টারনেটে সমস্যা থাকলে যে কলেজে পড়ুয়া পড়েন, সেখানেই ‘হার্ড কপি’ জমা দেওয়া যাবে।
উপাচার্যর সঙ্গে অধ্যক্ষদের বৈঠকে প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়নি। সোনালীদেবী জানিয়েছেন, “কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে। সেখান থেকে উত্তর লিখে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে জমা দেবেন।” পরীক্ষা হবে ১ থেকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে। কলেজগুলিকে ৩১ অক্টোবরের আগে খাতা দেখে নম্বর জমা দিতে বলা হয়েছে। বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গৌতম কুণ্ডু এদিন আলোচনায় যোগ দিলেও যান্ত্রিক কারণে বক্তব্য পেশ করতে পারেননি। পরে তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এবং কলেজগুলির জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা দরকার। সার্ভার যাতে মজবুত থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে।”
‘ওপেন বুক এক্সাম’-এ এদিন সায় দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ অধ্যক্ষরা। এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে বাড়িতে বসে বই দেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়া যাবে। উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা যে কলেজে পড়েন, সেই কলেজের অধ্যাপকরাই মূল্যায়ন করবেন। ফলপ্রকাশ হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। ইউজিসি’র সাম্প্রতিক গাইডলাইন অনুযায়ী, গোটা দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা নিতেই হবে। সুপ্রিম কোর্টও তাতে সিলমোহর দিয়েছে। সেই মতো এ রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পরীক্ষার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইউজিসির নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিতে হবে। পরে আদালত জানায়, কোভিড পরিস্থিতিতে কোনও রাজ্য মনে করলে পরেও পরীক্ষা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশনের অনুমতি দরকার। অক্টোবরে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার ইউজিসিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে।
উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, এখনও নয়াদিল্লি থেকে সম্মতি আসেনি। এই কারণে কলকাতা (University of Calcutta) এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেনি। সিলেবাসের কতটা অংশে পরীক্ষা হবে তা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়। সিলেবাস যতটুকু শেষ হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমার্স বাদে বিএ ও বিএসসির প্রশ্নপত্র তৈরি করা আছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। স্নাতকোত্তর বিষয়গুলির প্রশ্ন তৈরি করবে নির্দিষ্ট বিভাগ।
এদিকে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অ্যাপ বানিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। যেটির নাম রাখা হয়েছে ‘ছাত্রবন্ধু’। এখান থেকেই প্রশ্ন ডাউনলোড করবেন ছাত্রছাত্রীরা। উত্তরপত্রও পাঠাবেন একই জায়গা থেকে। পরীক্ষাগত কোনও সমস্যা সমাধানের বিষয় যদি জানতে হয়, তাহলে এর মাধ্যমেই তা স্পষ্ট করে নিতে পারবেন। এখানেই দেওয়া থাকবে টোল ফ্রি নম্বর। সেখানে সরাসরি ফোন করেও পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে ছাত্রছাত্রীদের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.