অভিরূপ দাস: “ইচ্ছে করছে উড়ে গিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে আসি।” ফরসা তুলোর মতো গালদুটো বেয়ে নামছে অঝোর ধারা। ঘড়িতে এক-একটা সেকেন্ড কাটছে। বুক ধুকপুক করছে ইরিনার। হাওড়ার আন্দুল এলাকার সৌরভ দে তাঁর স্বামী। বাপের বাড়ি ইউক্রেনে (Ukraine)। খবর পেয়েছেন, সেখানকার অবস্থা সাংঘাতিক।
জল নেই। বিদ্যুতও থাকছে না দীর্ঘক্ষণ। ইরিনার স্বামী সৌরভ ইউক্রেনের তেরনোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গিয়েছিলেন। ২০০১ সালের কথা। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০০৪ সালে তেরনোপিল শহরের বাসিন্দা ইরিনা প্রিতলিউকের সঙ্গে আলাপ। এরপরে প্রেম ও বিয়ে। ২০০৯ সালে বিয়ের পরে ইরিনা পাকাপাকি চলে আসেন হাওড়ায়। এই মুহূর্তে তিনি শহর কলকাতার দমদম পার্কের বাসিন্দা।
পশ্চিম ইউক্রেনের তেরনোপিল এলাকায় তাঁর বাপের বাড়ি। কেমন আছেন মা-বাবা? বৃদ্ধা ঠাকুমা? “শুনলাম খাবার জলটুকুও নেই।” হাপুস নয়নে কেঁদেই চলেছেন ইরিনা। তাঁর একমাত্র ভাই সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কালাশনিকভ নিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন। আর কী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হবে? জানেন না ইরিনা। ইরিনার কথায়, “বছর তিনেক সামরিক বাহিনীতে কাটিয়ে সদ্যই বাড়ি ফিরেছিল। ঠিক যখন ভাবছিলাম সব শান্ত হয়ে গিয়েছে আবার অশান্তি শুরু। সরকারি নির্দেশে ভাই ছুটে গিয়েছেন বন্দুক হাতে। রাশিয়ার তুলনায় সামরিক ধারেভারে অনেকটাই পিছিয়ে ইউক্রেন। কিন্তু হার না মানা মনোভাব তাঁদের রক্তে।”
ইরিনার কথায়, “আমার শহর হাল ছাড়বে না। শেষ বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত লড়াই করবে। আমি জানি।”
খ্রিস্টান হলেও বাঙালি ঘরের হিন্দু রীতি রেওয়াজ সব মানেন ইরিনা। শাশুড়ি মা তাঁকে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া শিখিয়েছেন। ইরিনার কথায়, “পরিবারের মঙ্গল কামনায় বারবার পাঁচালি নিয়ে বসে পড়ছি।”
শ্বশুরবাড়ির দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সমান উদ্বেগে ইরিনার চিকিৎসক স্বামী সৌরভ দে। যুদ্ধ লাগার পর থেকে ফোন করার চেষ্টা করে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়িতে। তিনি জানিয়েছেন, “বৃহস্পতিবার সারাদিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে একবার পেয়েছিলাম। ওখানে বিদ্যুৎ নেই। ফোন, ইন্টারনেট সব পরিষেবাই বিঘ্নিত। যে যেখানে পারছেন আশ্রয় নিচ্ছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির সকলেই এখন নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন। তবে খাবারদাবারের খুবই অভাব। কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এটিএমে টাকাপয়সা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ কোথাও যেতে পারবেন না। ফলে ওঁদের যে নিজেদের কাছে নিয়ে আসব সে উপায়ও নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.