ফাইল ছবি
অভিরূপ দাস: শরবতের বরফে টাইফয়েডের জীবাণু! চৈত্রের চাঁদিফাটা গরমে তা-ই খাচ্ছে সকলে।বসন্তেই তাপমাত্রা চল্লিশ ছুঁইছুঁই। গলা ভেজাতে শহরের রাস্তার শরবতের দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। শরবতের আড়ালে পেটে কী ঢুকছে? কী ব্যবহার হচ্ছে রাস্তার শরবতের দোকানে? তা দেখতে এসপ্ল্যানেড-নিউমার্কেট চত্বরে অভিযান চালাল কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ। ১৭ মার্চের সেই অভিযান শেষে একাধিক শরবত বিক্রেতার স্টল থেকে পাওয়া গিয়েছে খাওয়ার অযোগ্য বাণিজ্যিক বরফ।
কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ডা. তরুণ সাফুই জানিয়েছেন, যে সমস্ত দোকানে বাণিজ্যিক বরফ পাওয়া গিয়েছে, তা নষ্ট করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভার খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা। আখের রস থেকে, ফলের শরবতের দোকান, শহরের একাধিক শরবতের দোকানে লুকিয়ে চুরিয়ে ব্যবহার হচ্ছে সহজলভ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস বা বাণিজ্যিক বরফ। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস আদতে মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কেন বাড়ছে এই বরফের ব্যবহার?
শরবতের দোকানের বিক্রেতারা বলছেন, পানের অযোগ্য জল দিয়ে তৈরি হওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইসের দাম অনেকটাই কম। মোটে দুশো টাকা খরচ করলেই মেলে একটা গোটা বরফের চাঁই। তা থেকে পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো গ্লাস শরবত বানাতে পারেন বিক্রেতা। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, গোটা গ্রীষ্মকাল জু়ড়েই শহরে অভিযান চালাবে পুরসভা।এই বরফের ব্যবহার বাড়ায় চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, ‘‘যে জলে এই বাণিজি্যক বরফ তৈরি হয় তা আদৌ পান যোগ্য নয়। স্বাভাবিকভাবেই শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর এই বরফ। বিশেষ করে শিশুদের শরীরে এর প্রভাব মারাত্মক। এদিকে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের ভিড় এইসব শরবতের স্টলেই সবচেয়ে বেশি।’’
সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার অভিযানে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান খাওয়ার যোগ্য বরফ দেখাতে পেরেছে। অধিকাংশ বরফ মাছ সংরক্ষণের। কিছুতে থিকথিক করছে ধুলো। প্রতিটি দোকানকে আরও সতর্ক হয়ে ব্যবসা করতে বলেছেন পুরসভার আধিকারিকরা। শুধুমাত্র পানের অযোগ্য জল দিয়ে তৈরি হচ্ছে তাই নয়, এমনভাবে এইসব বরফ দোকানে আনা হয় যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, নোংরা রাস্তার উপর দিয়ে টানতে টানতে এই বরফ নিয়ে আসেন বিক্রেতা। বরফ যাতে গলে না যায় অনেকে নোংরা চটের বস্তা জড়িয়ে রাখেন বরফে। স্বাভাবিকভাবেই জীবাণু থিকথিক করে তাতে। এই ধরনের শরবতের বরফ পেটে গেলে জলবাহিত রোগ টাইফয়েড হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। হতে পারে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস ই। বরফের পাশাপাশি শরবতের দোকানে কৃত্রিম রং নিয়েও সতর্ক থাকতে বলছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, কৃত্রিম এই রংগুলি থেকে ভবিষ্যতে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.