অভিরূপ দাস: চুরি হয়েছে। জমি-বাড়ি-গাড়ি নয়। আস্ত একটা গান। আর সেই ‘চোরাই’ গানের ছন্দেই কাঁপছে তামাম বাংলা। দানা বাঁধছে নানা বিতর্কও। ‘টুম্পা’-র কথা হচ্ছে। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয় এই গান নিয়ে ‘ব্রিগেড চলো’র প্যারোডি তৈরি করেছে সিপিএম। ‘টুম্পা, ২৮-এ তুলব আওয়াজ। টুম্পা, মোদি—দিদি সব ভেগে যাক।’ রাজনীতি নয়। নিছক আনন্দ দিতেই গান তৈরি করেছিলেন অরিজিৎ, আরব, অভিষেকরা। না জানিয়ে সে গান ভোটের প্রচারের জন্য ব্যবহার হতে ক্ষুব্ধ ‘টুম্পা’-র সৃষ্টিকর্তারা।
‘টুম্পা’-র গীতিকার আরব জানিয়েছেন, মূল গানটায় কোনও রাজনীতি নেই। রাজনীতি আমরা বুঝিও না। মানুষনীতি বুঝি। গানটি প্যারোডি করার আগে জানিয়ে নেওয়াটা কাম্য ছিল। ইউটিউবে ইতিমধ্যেই ৯ কোটি ৬০ লক্ষ শ্রোতাকে ছুঁয়ে ফেলা এ গানে রাজনীতির বুলি লাগায় অসন্তুষ্ট টুম্পা- মিউজিক ভিডিওর প্রযোজকও। প্রযোজক অরিজিৎ সরকার সাফ জানিয়েছেন, “আমাদের গান ব্যবহারের আগে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।” তাঁর যুক্তি, “টুম্পা নিয়ে প্যারোডি এর আগে অনেকেই করেছে। শুধু প্যারোডি করলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু গানটা ভোট প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানেই আমাদের আপত্তি।” ইতিমধ্যেই এই গানের কথা দিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু করেছে সিপিএম। পাড়ায় পাড়ায় অটোতে প্রচার চলছে, ‘টুম্পা তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব।’ সব দেখেশুনে আগামী দিনে সরকারিভাবে বামেদের চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছেন অরিজিৎ। ক্ষুব্ধ অরিজিৎ জানিয়েছেন, “ডান-বাম কোনও দলকেই এ গান রাজনীতিতে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা কপিরাইট দাবি করব।” এখনও কেন চুপ গীতিকার প্রযোজক।
আলোর থেকে দ্রুতগতিতে ভাইরাল হওয়া এ গানের সৃষ্টিকর্তারা জানিয়েছেন, দর্শকদের নিছক আনন্দ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘টুম্পা।’ মিউজিক ভিডিওর প্রযোজক অরিজিৎ সরকারের কথায়, বাঙালির বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে টুম্পা। পাড়ায়, মফস্বলে জলসায় অনেকেই এ গান গাইছেন। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। টুম্পার কপিরাইট বিক্রি করে টাকা রোজগারের কোনও ফিকির নেই। কিন্তু এ গান গেয়ে ভোট টানার কোনও অধিকারও নেই কারও। কপিরাইট বিতর্কে মুখ খুলেছেন নীলাব্জ নিয়োগী। সিপিএমের ‘টুম্পা’ প্যারোডি-র মিউজিক অ্যারেঞ্জার তিনিই। গানচুরি প্রসঙ্গে নীলাব্জ জানিয়েছেন, “প্যারোডি তৈরি করলে কপিরাইট অ্যাক্ট লঙ্ঘিত হয় এমনটা আমার জানা নেই। অনেক জনপ্রিয় গানেরই প্যারোডি তৈরি হয়। এই মুহূর্তে সকলের মোবাইলে একটাই গান টুম্পা। সেই জনপ্রিয়তাকে মাথায় রেখেই প্যারোডি।” তবু কি গানের প্যারোডি করার সময় মূল গানের গীতিকারকে জানানোর প্রয়োজন ছিল না?
টুম্পা বিতর্কে গীতিকার, প্রযোজকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন গায়ক কবীর সুমন। তাঁর কথায়, “অনুমতি না নিয়ে কোনও গানের প্যারোডি করা বেআইনি এবং অন্যায়।” মূল গানটি শুনেছেন গানওয়ালা। তাঁর কথায়, টুম্পা গানটি অসামান্য একটি স্যাটায়ার। মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজের উপর কটাক্ষ এই গান। গানটির একটি সুর আছে, তাল আছে। তবে বামেদের তৈরি করা প্যারোডি শোনেননি তিনি। গানচুরি প্রসঙ্গে নাগরিক কবিয়াল জানিয়েছেন, “আমাদের দেশে এখনও কপিরাইট আছে। মূল গানের লেখক, সুরকারকে না জানিয়ে ইচ্ছেমতো শব্দ বসিয়ে যাঁরা প্যারোডি বানিয়েছেন তারা গর্হিত কাজ করেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.