রাহুল চক্রবর্তী: অবশেষে বিয়েটা করতেই হচ্ছে। নিজের ভালর জন্যই! পরিবারের চাপও রয়েছে। পাত্রের নাম গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী। আসছে ডিসেম্বরে ৬৪ পেরিয়ে ৬৫-তে পা দেবেন। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বাসা বেঁধেছে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ। সঙ্গে আর পাঁচজনের মতো বার্ধক্যজনিত সাধারণ রোগব্যাধি তো আছেই! সে সব নিয়েই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়ানোয় বিরাম নেই একটুও। বিরাম নেই বেনিয়মেরও।
বেনিয়ম অবশ্য স্বাভাবিক! স্নান, খাওয়া থেকে ঘুম-সবেতেই। রাজনীতির অবশ্য সেটাই দস্তুর! সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখা ইস্তক দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়কের নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকেছে। পথে ঘাটে যখন যা জোটে, তাই ভরসা। এদিকে ঘরেও সেভাবে দেখভাল করার কেউ নেই। যিনি এতদিন ভালমন্দের দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখতেন, দীর্ঘদিনের সেই জীবনসঙ্গিনী হাফিজা বিবি প্রয়াত হয়েছেন বছর দেড়েক হল। মন্ত্রীর তিন ছেলে। কর্মসূত্রে তাঁরা অন্যত্র থাকেন। পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ বলতে বৃদ্ধা দিদি। তাঁর পক্ষেও দেখভাল অসম্ভব। ফলে মন্ত্রীকে দেখাশোনা করার লোক নেই। জীবন সায়াহ্নে এসে তাই বিয়ে করতে চলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। সে কথা অবশ্য গোপনও করছেন না তিনি। বলেছেন, “বাড়ির চাপ আছে। ফ্যামিলিগত চাপ আছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বিয়ে করতে হবে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লাকে প্রতিদিন সেই সুদূর উস্তির বাড়ি থেকে আসতে হয় রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তাঁর সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরে। তার আগে ভোর থেকে দলীয় সংগঠনের কাজ। রাইটার্স থেকে ফেরার পথে ফের দলের কাজে এলাকা ঘুরে বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে সেই রাত! পরিবার সূত্রেই জানা যাচ্ছে, গিয়াসুদ্দিন মোল্লাকে সময়মতো ওষুধ, খাবার দেওয়ার জন্য একজনের প্রয়োজন। তাই পরিবারের লোকজনই তাঁকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে চলেছেন লাগাতার। মন্ত্রীর পারিবারে অভিভাবক বয়োজ্যেষ্ঠ দিদি। তাঁর নির্দেশ মন্ত্রীর পরিবারে শেষ কথা। সেই দিদিই ক’দিন আগে মন্ত্রীকে নির্দেশ দেয়েছেন বিয়ে করার জন্য।
দিদির নির্দেশ অমান্য করার সাহস কারও নেই। এমনকী মন্ত্রীমশাইয়েরও! পারিবারিক সূত্রে খবর, মন্ত্রীর জন্য পাত্রী দেখার পর্ব শেষ। কনে এই দক্ষিণ ২৪ পরগনারই বাসিন্দা। পরিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজনও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর। যদিও মন্ত্রী বলছেন, “পরিবারের চাপ আছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।”
পাশাপাশি নিজের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেছেন, “সকাল ন’টায় বাড়ি থেকে বের হই। আর বাড়ি ঢুকতে রাত ১০টা গড়িয়ে যায়। মানুষের জন্যই আমার কাজ। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ দিদি বিয়ে করার কথা বলেছেন। পাশে একজন কেউ থাকুক, তার প্রয়োজন রয়েছে। সব মিলিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে।”
‘সুখবর’-টা শুনে খুশি মন্ত্রিসভার সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা। যেমন রাজ্যের বরিষ্ঠ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় খবরটা জেনে প্রথমে খানিকক্ষণ চুপ! তারপরই একগাল হাসি। বললেন, “হ্যাঁ! ও বেশ অসুবিধাতেই আছে। ওর শরীর-মন যাতে ভাল থাকে, তার জন্য শুভেচ্ছা রইল।” তার পরই তাঁর সরস সংযোজন, “গিয়াস যেন আমাকে নেমন্তন্ন করতে না ভুলে যায়!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.