সুব্রত বিশ্বাস: কড়ির ডাকে নিঃস্ব হচ্ছেন যাত্রীরা। হাওড়া স্টেশনে এমন পরিস্থিতিতে এখন নাকের জলে-চোখের জলে হচ্ছেন ঘরমুখীরা। ট্রেন হাওড়া আসার পর নতুন এবং পুরনো স্টেশনে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছেন ট্যাক্সি ও প্রাইভেট গাড়ির দালালরা। যাত্রীদের সঙ্গে দর কষাকষি করেও মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁদের এই সব গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। এই দালালের খপ্পরে পড়ে পকেট শূন্য হচ্ছে যাত্রীদের। সম্প্রতি হাওড়া স্টেশনে যাত্রী পরিষেবা খতিয়ে দেখতে এসে এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এমনই নালিশ পান যাত্রীদের থেকে।
[এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের সমর্থনে অনশনে কবি মন্দাক্রান্তা সেন]
বিষয়টি সমাধানে রেল কতটা আগ্রহী তা স্পষ্ট না হলেও দালাল দৌরাত্ম্য বাড়ার জন্য হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। রেল নিউ কমপ্লেক্সের সামনে গাড়ি রাখার পার্কিং জোন করেছে। এই জোনে এমন প্রায় দেড়শো টাটা সুমো ও অন্য গাড়ি থাকে যা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে দালালরা। দালালদের অধিকাংশেরই রয়েছে নিজস্ব গাড়ি। ফলে তাদের সুবিধা এক্ষেত্রে বেশি। সাধারণ ট্যাক্সি চালকদের কথায়, দালাল দৌরাত্ম্যে তাদের অবস্থা এখন সংকটজনক। তাঁরা রীতিমতো নাম করে বলেন, জনৈক গুড্ডু, হাবিল, মোকতান, রাজকুমার, বিনোদ, মুন্না, এরাই গাড়িগুলির দালালির পান্ডা। প্রায় দেড়শো প্রাইভেট গাড়ির এই চক্র রয়েছে। প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নেয় ট্রাফিক পুলিশ বলে তাঁরা জানান। এছাড়া গাড়িগুলির থেকে জেলা পুলিশ, কলকাতা পুলিশ সবাই টাকা নেয়। চালকদের কথায়, গাড়িগুলি দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত এটা সব পুলিশকর্মীদের জানা। ফলে হেনস্তা এড়াতে এই সমঝোতার পন্থা রয়েছে বলে তাদের মত। হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জা জানলাম তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। স্টেশন চত্বরে দালাল যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা রেল করতে পারলেও পার্কিং জোনে গাড়ি রেখে এধরনের কাজকর্ম রুখতে নজরদারি বাড়ানো হবে।
শুধু পার্কিং এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি রেখেই এই ধান্দা চলে না। ট্যাক্সি চালকদের কথায়, হাওড়া স্টেশনের বাইরে ট্রাফিক অফিসের সামনে নীল ও হলুদ অনেক ট্যাক্সি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। দূরের যাত্রীদের ‘ইচ্ছা ভাড়াতে’ নিয়ে যাওয়াই এদের কাজ। এজন্য ট্রাফিক পুলিশকে ‘এক কড়ি’ অর্থাৎ ১০০ টাকা করে দিতে হয় বলে তাঁরা জানান। পাশাপাশি পান থেকে চুন খসলে ট্যাক্সি ধরে কেস দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক প্রকার কেড়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্টেশনের সামনের লেন দিয়েই পার্সেলে আসা মাছ, আনাজের ঠেলা যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশই। এজন্য মোটা অঙ্কের মাসোহারার হিসাব রয়েছে। ঠেলা চালকদের কথায়, মাসোহারা না দিলে গঙ্গার ধার দিয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে মার্কটে যেতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। তাই সমঝোতায় আসতেই হয়েছে। ট্রাফিকের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ ট্যাক্সি চালকরাই। অনেকেই হাওড়া স্টেশনে যেতে চান না ট্রাফিক পুলিশের অত্যাচারের ভয়ে। রাতে অত্যাচার সীমাহীন পর্যায়ে চলে যায় বলে জানান তাঁরা। সিভিক পুলিশরাই তখন সার্জেন্ট সেজে যান। ট্যাক্সি ধরে এরাই মোটা টাকা আদায় করে। হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের টাকাপয়সা লেনদেনে জাড়িত জনৈক এএসআই মান্নানবাবু বলে তাঁদের অভিযোগ। যদিও সিটি পুলিশের আওতায় হাওড়া ট্রাফিকের কর্তাদের কথায়, অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এক শ্রেণির কর্তাদের কথায়, হাওড়া স্টেশন চত্বরটির ট্রাফিক আগে রেল পুলিশের আওতায় ছিল। বছর ছয় আগে তা জেলা পুলিশের আওতায় আসে। তবে সিটি পুলিশের সদর দপ্তর থেকে স্টেশন দূরে হওয়ায় সহজেই অনেকে নানা বেআইনি কাজ করতে পারছে। তাতে নজর দেওয়া উচিত।
[রাজ্যজুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ তুমুল বৃষ্টি, বুদবুদে বাজ পড়ে মৃত ২]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.