দীপঙ্কর মণ্ডল: প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে টানা ৭৪ দিন পঠনপাঠন হচ্ছে না। শুধু স্নাতক-স্নাতকোত্তরের পড়াশোনাই নয়, গবেষণার কাজও বন্ধ। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিকরা প্রতিদিন আসেন এবং ফিরে যান। উপাচার্য পদ ফাঁকা। কার্যত অভিভাবকহীন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ধরনা চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। আন্দোলনের পোশাকি নাম ‘নীল অভিযান’।
পড়ুয়ারা গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়িয়ায় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগ কার্যত বন্ধ করে রেখেছেন। টিএমসিপি সদস্য ও আন্দোলনের মুখ শৈলেশ মহাপাত্রর অভিযোগ, “চার বছর পড়াশোনা করে আমরা বিএফএসসি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। কর্মক্ষেত্রে ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার (এফইও) হিসাবে আমাদের চাকরির সুযোগ ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে মৎস্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ এই সিদ্ধান্তে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের আন্দোলন দফতরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।” প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দু’টি বিভাগের টিএমসিপি ইউনিটও এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আমি প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের কথা শুনেছি। সবদিক খতিয়ে দেখতে একটু সময় লাগছে। পড়ুয়াদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা দেখা হবে।”
আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বক্তব্য, মৎস্য উৎপাদনে এক সময় শীর্ষস্থানে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। গত কয়েক বছরে দ্রুতগতিতে এগিয়েছে অন্ধপ্রদেশ। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন ৫.৯০ লক্ষ টন থেকে বেড়ে ৩৪.৫০ লক্ষ টনে পৌঁছে গিয়েছে। এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মৎস্য উৎপাদন ১০.৬০ লক্ষ টন থেকে বেড়ে মাত্র ১৭.৪০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। বিহার, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও মৎস্য উৎপাদনে বাংলাকে টক্কর দিচ্ছে। মৎস্যবিজ্ঞান পড়ুয়াদের অভিযোগ, এই সংকটের প্রধান কারণ মৎস্য দফতরের দুর্বল পরিকাঠামো। তাঁরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৬ জন মন্ত্রী এবং তৎকালীন মুখ্যসচিবকে নিয়ে গঠিত হয় ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স অন ফিশারিজ’। কমিটির রিপোর্টও জমা পড়ে। রিপোর্টে মৎস্য দফতরের পুনর্গঠন, কৃষি দফতর ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সমতুল পরিকাঠামো এবং নির্দিষ্ট পদে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাব কার্যকর করার দাবিতেই ৭৪ দিন ধরে ধরনা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রান্তিক মৎস্যচাষিদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে স্নাতক পড়ুয়াদের সাহায্য পুরোপুরি নেওয়া হচ্ছে না। পদোন্নতি হচ্ছে বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) কোর্স করা ছাত্রছাত্রীদের। তার প্রতিবাদেই সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। মৎস্যবিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির টিএমসিপি পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। রাজ্যের প্রান্তিক চাষিদের কাছে আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মৎস্য দফতরের পুনর্গঠন নিয়ে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর প্রস্তাব কার্যকর করতেই হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এবং ডেয়ারির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লিখিত সমর্থন এসেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.