ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) ইতিহাসে প্রথমবার সরস্বতী পুজো হবে এবছর। এমনই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। এ নিয়ে ইতিমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজো করতে চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। যা দেখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা করে দিতে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুজোর অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ডিরোজিয়ান পন্থায় বিশ্বাসী। তাই এখানে কোনও ধর্মাচার করা সম্ভব নয়।
এবছর ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজো। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের দু’শতকের ইতিহাস বদলে ক্যাম্পাসেই সরস্বতী পুজো করতে চায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP)। ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, পুজোর অনুমতি চেয়ে একাধিকবার চিঠি, ইমেল করা হয়েছে ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণকুমার মাইতিকে। কিন্তু প্রতিবারই চিঠিতে ‘কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড’ করে দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ পুজোর অনুমতি মেলেনি। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা।
প্রেসিডেন্সির তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের ফেসবুক পেজে লেখা হয়, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো হবে, এর মধ্যে নেতিবাচক কোনো মতামত থাকতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতভাবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা সম্ভব নয়, এমনই জানিয়েছেন আমাদের ডিন অফ স্টুডেন্টস। অথরিটি স্পষ্টভাবে যে পয়েন্টটি তুলে ধরেছেন- প্রেসিডেন্সি সেক্যুলার ক্যাম্পাস।” এরপর তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ জানে না। অর্থাৎ প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজেদের মতো আচার- অনুষ্ঠান-উৎসব পালন করতে পারবে।
অনুমতি না দেওয়া নিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের দিকে আঙুল তুলেছেন প্রেসিডেন্সির তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অরিত্র মণ্ডল। তাঁর কথায়, “তারা কি সেক্যুলার ক্যাম্পাসের ধোঁয়াশার আড়ালে বাম সংঠনের চাপে নতিস্বীকার করেছেন? কারণ এরকম উদাহরণ ইতিহাসে আমরা দেখতে পেয়েছি যেখানে সুভাষ চক্রবর্তী মহাপীঠ তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বলে তাঁকে সিপিএম দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দীর্ঘ ২০৬ বছরের ইতিহাসে বাম একনায়কতন্ত্রের অত্যাচারকে আসলে অথরিটি ভয় পাচ্ছে। এরকম ভয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী অযথা পায়। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে বলছি ওদের দিন চলে গেছে, আর ফিরবে না, নিজেরা ঘুরে দাঁড়াও, সত্যের জন্য দাঁড়াও। অকারণে ওদের অযৌক্তিক মানসিকতাকে, কাজকে সমর্থন করা বন্ধ কর।” তাঁদের সাফ ঘোষণা, ক্যাম্পাসে পুজোর অনুমতি না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটেই পুজো করবেন তাঁরা।
এদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের এসএফআই ইউনিটের সভাপতি আনন্দরূপা ধড় জানান, “এটা সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। ডিরোজিও পন্থা মেনে চলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে কোনও পুজো হয় না। সেই রীতি মেনেই এবার অনুমতি দেওয়া হয় না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.