ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: প্রভাবশালী তত্ত্বই কাঁটা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন না হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। আগামী ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল ব্যাঙ্কশাল আদালত। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ফের আদালতে পেশ করা হবে তাঁকে। জেল হেফাজতে থাকাকালীন জেলে গিয়ে তাঁকে জেরা করতে পারবেন ইডি আধিকারিকরা। তদন্তকারীদের আরজিতে সায় দিয়ে এমনই জানাল আদালত।
জেল হেফাজত শেষে শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয় কুন্তলকে। তার আগে বিধাননগরে মহকুমা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কার্যত বোমা ফাটান যুব তৃণমূল নেতা। তিনি দাবি করেন, মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল বিজেপিতে যুক্ত। একথা আদালতকেও জানাবেন বলেও দাবি করেন কুন্তল। এরপর এদিন বেলা তিনটে নাগাদ আদালতে শুরু হয় সওয়াল জবাব।
কুন্তলের আইনজীবী আদালতে জানান, “এই মামলা গতবছর থেকে চলছে। তদন্ত চলাকালীন দু’বার চার্জশিট ফাইল হয়ে গিয়েছে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে সেখানে ৬ অভিযুক্তের তালিকায় তাপস মণ্ডলের নাম রয়েছে। তাপসের বয়ানের ভিত্তিতে কুন্তল ঘোষের নাম আছে। অথচ তাপসকে এখনও ইডি বা কোনও সংস্থা গ্রেপ্তার করেনি। কেবলমাত্র তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে কুন্তলকে গ্রেপ্তার করা হল। অথচ এর আগে ১০০ জনের বেশি সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। যাদের কারও বয়ানে কুন্তলের নাম আসেনি। যতবার কুন্তলকে ইডি ডেকেছে তিনি গিয়েছেন। তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ইডির মনে হল কুন্তলকে গ্রেপ্তার করতে হবে।”
কুন্তলের আইনজীবী আরও বলেন, “ইডি’র বক্তব্য অনুযায়ী কুন্তলের ফ্ল্যাটে তল্লাশিতে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি ও ডিভাইস পাওয়া গিয়েছে। এটা মানি লন্ডারিং মামলা। কিন্তু তাঁর বাডি থেকে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার চারদিনের মধ্যে আদালতে সিজার লিস্ট জমা দিতে হয়। যাতে তদন্ত প্রভাবিত না হয়। এখনও কোনও সিজার লিস্ট আদালতে ইডি’র তরফে দেওয়া হয়নি। পরে চার্জশিট দেওয়ার সময় ইডি টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে দেখিয়ে দিতে পারে। তাঁর পজেশন থেকে বা কনসিল করা কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। যা PMLA আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখানে তাহলে কী করে PMLA আইন প্রযোজ্য হয়?” এরপর আইনজীবী তাঁর মক্কেল অর্থাৎ কুন্তল ঘোষের জামিনের আবেদন জানান।
পালটা ইডি’র আইনজীবী জবাব দেন। ইডি’র তরফে দাবি করা হয়, “সার্চ অ্যান্ড সিজারের পর সেটা অ্যাডজর্নিং অথরিটিকে পাঠাতে হয়। সেটা আমরা করেছি। PMLA আইনের ৫০ নম্বর ধারাতে বলা আছে। ইডি’র আইও’র সামনে দেওয়া বয়ান আদালতে গ্রহণযোগ্য। কুন্তলের দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ছয় কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকার উৎস জানতে চায় ইডি। ৩০ কোটি টাকা যেটা তিনি রিসিভ করেছে সেটা সাযেন্টিফিকালি পাওয়া গিয়েছে। যদিও অভিযুক্ত তা অস্বীকার করেছে। দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ছয় কোটি টাকা তোলার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যা তুলে অন্যত্র পাঠানো হয়ে গিয়েছে। বেআইনিভাবে ওই টাকার লেনদেন হয়েছে।”
ইডি’র আরও দাবি, “১৩০ জন প্রার্থীর থেকে ৮ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। পার্থর বাড়ি থেকে যে ৫০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে কুন্তলের দেওয়া টাকাও আছে। ১২০০ প্রার্থীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আদালত থেকে চাকরির অর্ডার করিয়ে দেবে বলে টাকা নেওয়া হয়। কুন্তল এবং তার সহযোগীদের মাধ্যমে পার্থ চট্টাপাধ্যায় ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে টাকা গিয়েছে। বাকি নামগুলি তদন্তের স্বার্থে বলা হচ্ছে না।” দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর কুন্তলের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে’ বলেও দাবি করেন কুন্তল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.