স্টাফ রিপোর্টার: সিগারেটের ছ্যাঁকা শরীরে৷ গলায় কালশিটে দাগ৷ দেহে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন৷ বন্ধ ঘরের ভিতর বিছানায় পড়ে থাকা দেহটার পাশের মোবাইলের কললিস্ট মুছে ফেলা হয়েছে৷ প্রাথমিক তদন্তে খুন বলে ধারণা করলেও কেন, কীভাবে খুন তা বুঝতে পারছেন না তদন্তকারীরা৷ বৃহস্পতিবার সকালে বাগুইআটির রঘুনাথপুরে নিজের বাড়িতে যখন উদ্ধার হল নিথর প্রসেনজিত্ দাসের দেহ তখন পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পাড়ার লোকজনও অবাক৷ তৃণমূল কর্মী এই যুবককে গতকাল রাতেও এলাকায় দেখেছেন সবাই৷ রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন তিনি৷ যেমন রোজ যান৷ কোনও অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেননি কেউ৷ তা হলে কে খুন করল তাঁকে? উত্তরের খোঁজে হন্যে পুলিশ৷ ঘটনাস্থলে যান বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা৷ কিন্তু আজ দুপুর পর্যন্ত রহস্যের কিনারা হয়নি৷ তাঁদের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাতে জনা চার-পাঁচেক বহিরাগত এসেছিল৷ তাদের দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দা স্বপ্না দাস৷ তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রাত আড়াইটা নাগাদ তিনি দেখেন কয়েকজন প্রসেনজিতের বাড়ির সামনে থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের হাত থেকে ভারী কিছু পড়ে গিয়েছিল৷ তার আওয়াজেই ঘুম ভেঙেছিল স্বপ্নাদেবীর৷ তবে অন্ধকারে ঠিকমতো কাউকে চিনতে পারেননি তিনি৷ পুলিশের অনুমান, যদি খুন হয়ে থাকেন প্রসেনজিৎ, তবে আততায়ীরা তাঁর পরিচিত ছিল৷ ফোনে তাঁকে ডেকে তুলেছিল আততায়ীরা৷ বাড়ির ভিতর ঢুকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার আগে মোবাইলের কললিস্ট মুছে দেয় তারা৷ এবং বাইরে থেকে দরজার শিকল লাগিয়ে দেয়৷ পুলিশ অবশ্য মোবাইলের কললিস্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে৷ কেন না মোবাইল থেকে মুছে দিলেও সার্ভার থেকে সমস্ত তথ্য মিলবে৷ এটাই এখন রহস্য-মৃত্যুর ব্রেক-থ্রু করতে পুলিশের কাছে তুরুপের তাস৷
রঘুনাথপুরের সুকান্তপল্লির প্রসেনজিত্ এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী৷ নানা সময়ে মিছিল-মিটিংয়ে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ একসময় একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় কাজ করতেন৷ এখন কর্মহীন৷ তবে ইদানীং জমি-বাড়ি কেনাবেচার কাজ করছিলেন৷ এলাকার প্রোমোটারদের একাংশের সঙ্গেও ভাল যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ বাবা, মা ও তিনি৷ তিনজনের সংসার৷ একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে পাশাপাশি দু’টি ঘরে থাকতেন তাঁরা৷ আজ সকালে বাবা মানিক দাসের ঘুম ভাঙলে বাইরে বের হওয়ার সময় দেখেন বাইরে থেকে দরজা আটকানো৷ ছেলেকে ফোন করেন তিনি৷ কিন্তু পাশের ঘরে থাকা সত্ত্বেও ছেলে ফোন ধরছিলেন না৷ তখন চিৎকার করে লোক ডাকেন তাঁরা৷ দেখা যায়, প্রসেনজিতের ঘরেও বাইরে থেকে শিকল তোলা৷ তারপর দরজা খুলতেই ওইভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই যুবককে৷ চিকিৎসককে ডাকা হয়৷ তিনি এসে জানান, মৃত্যু হয়েছে প্রসেনজিতের৷ ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ৷ মানিকবাবুর অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে৷ পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামও বলেছেন তিনি৷ দু’জনকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷ পুরসভার বোরো চেয়ারম্যান মণীশ মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে যান৷ তিনি বলেন, কেন এই ঘটনা তা দেখুক পুলিশ৷ তবে এটি রাজনৈতিক খুন বলে তিনি দাবি করেননি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.