ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: চার পুরগিনমের ভোটের প্রচার কীভাবে হবে, কেমন হবে – তা নিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। কিন্তু তার আগে জেলাভিত্তিক পুরনিগমে প্রচারের ক্ষেত্রে কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতি অনুযায়ী কঠোর বিধিনিষেধ বেঁধে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল (TMC)। বিরোধী বিজেপি আপাতত অপেক্ষা করছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর। বাম ও কংগ্রেস একযোগে দোষারোপ শুরু করেছে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর। তাদের অভিযোগ, সরকারি দল তাদের প্রচার করতে দেয় না। আর তৃণমূলের দোসর হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেয় কমিশন।
পজিটিভিটির দিক থেকে কলকাতার পর হাওড়া, তারপরই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর যে জেলার অন্তর্গত। তালিকায় আরও পরে হুগলি। যে জেলার চন্দননগরে ভোট। এই তালিকার আরও পিছনে দার্জিলিং (Darjeeling)। তার অন্তর্গত শিলিগুড়ি পুরনিগমে ভোট রয়েছে। কিছু পরে রয়েছে বর্ধমান। আসানসোল পুরনিগম এই জেলার অন্তর্গত। এই হিসাবেই পরিস্থিতির বিচারে প্রচারেও বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া হয়েছে, ভোটার আর প্রার্থী – দু’জনেরই স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।
সোমবারই মনোনয়ন (Nomination) জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার আগে রবিবার বিধাননগর পুরনিগম নিয়ে জরুরি বৈঠক সেরেছে তৃণমূল। জানানো হয়েছে, বহু কর্মী-সমর্থক নিয়ে ভিড় বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীকে কোনও কিছুর সংস্পর্শে আনা যাবে না। কারও স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। আসানসোল, চন্দননগর বা শিলিগুড়ি পুরনিগমে প্রচারের ক্ষেত্রে ততটা না হলেও প্রচারে ভিড় এড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া সব ক্ষেত্রেই বড় বা ছোট সব সভা বা মিছিলই আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এদিন বিধাননগর নিয়ে বৈঠক সারেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দেবরাজ চক্রবর্তী, তাপস চট্টোপাধ্যায় ও পার্থ ভৌমিকের মতো নেতৃত্ব। পরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “শারীরিক দূরত্ব বিধির কথা মাথায় রেখে প্রচার হবে। মনোনয়ন দ্রুত সেরে ভোটারদের কাছে যাওয়ার পালা। প্রার্থীর সঙ্গে দু-তিনজন থাকবেন সেই প্রচারে। ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীর স্বাস্থ্যের কথাও মাথায় রাখতে হবে।” আসানসোল নিয়ে এখনই সেভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। বলেছেন, “আপাতত কোনও নির্দেশ আসেনি। ন্যূনতম কোনও সিদ্ধান্ত হলে দলীয় স্তরে সকলকে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ভোটের মুখে এমন করোনা পরিস্থিতি নিয় উদ্বেগের কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি নিজেও বিধাননগরে থাকেন। বলেছেন, “প্রচার নিয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। কমিশন আশা করি, এনিয়ে কিছু উদ্যোগ নেবে। তারপরই আমাদের বক্তব্য জানাতে পারব।” একইসঙ্গে এদিন জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, “এই বিজ্ঞপ্তিতে জমায়েত বা মনোনয়ন দিতে যাওয়ার বিধি নিয়ে কোনও নির্দেশিকা নেই। কেমন এমন বিজ্ঞপ্তি জারি হবে?” কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যর তির নির্বাচন কমিশন ও তৃণমূলের দিকে। বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন তাবেদারি করতেই ব্যস্ত। কীভাবে শাসকদলকে সন্তুষ্ট করবে ভেবে পায় না। নির্বাচন ঘোষণা করে দিল, অথচ কোভিড পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রচার হবে তা স্পষ্ট করল না।” যদিও পুরনিগম বা পুরসভার ভোটের ক্ষেত্রে বড় সভা তাঁরা করেন না বলে জানিয়েছেন প্রদীপবাবু। বলেছেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচারের উপর জোর দিই। কিন্তু শাসকদল যাতে সুবিধা পায় তার জন্য নির্বাচন নিয়ে একটা কথাও মুখ্যসচিব বললেন না।”
সিপিএম (CPM) নেতা সুজন চক্রবর্তীও প্রচার প্রসঙ্গে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, “সরকার বিধিনিষেধ আরোপের নামে ভোটের আগে দুয়ারে সন্ত্রাস ও সর্বনাশ ডেকে আনবে। কমিশন মুখে কুলুপ এঁটেছে। বোঝাই যাচ্ছে বিরোধীদের প্রচার করতে দেওয়া হবে না।” বামেদের জবাব দিয়ে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “বিরোধীদের লোক নেই বলে এসব অজুহাত দিচ্ছে। ওরা একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারে। অশান্তি করতে পারে। আমরা অনুরোধ করব মানুষকে ভোটটা দিতে দেবেন।” একইসঙ্গে বামেদের প্রচার নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে বলেছেন, “ওরা নিজেরাই একদিন ২৩৫ বলে গর্ব করেছিল। এখন শূন্যে এসে থেমেছে। আমি বলব, বছর কুড়ি ভোটে না লড়ে নিজেদের ক্ষয় রোধ করুক। চিন ৪০ বছর অলিম্পিকে অংশ না নিয়ে নিজেদের তৈরি করেছিল। সেই পথ নিক বামেরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.