স্টাফ রিপোর্টার: কী হল আজ আমার বিরুদ্ধে নতুন কিছু বলেছেন? প্রশ্নকর্তা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
না, আপনি তো আজকে মামলার বাইরে দলের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। উত্তর দেন কুণাল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় করমর্দনের জন্য কুণালের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। বাগ্যুদ্ধের বাতাবরণের মধ্যে হাতে হাত রেখে হাসিমুখে দু’জনকে কথা বলতে দেখে চক্ষু বিস্ফারিত হয় চারপাশের বিশিষ্টদের।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সাবলীলভাবে হেসে হেসে কিছু বোঝাচ্ছেন। আর কুণালও মাথা নেড়ে হাসিমুখে তাঁর কথা শুনছেন, উত্তর দিচ্ছেন, সংলাপ চলছে দু’জনের। স্থান, বাইপাসের আইটিসি রয়্যাল হোটেলের বাঙ্কোয়েট। উপলক্ষ ‘আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’ আয়োজিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের বিশিষ্টদের ‘বছরের বেস্ট’ সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান। যেহেতু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এখন প্রচারের শীর্ষে রয়েছেন, সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে বহু রায় দিচ্ছেন, যেহেতু প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ তাঁকে দলের তরফে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করছেন, তাই দু’জনের মধ্যে কী কথা হল সেটা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। দু’দফায় দু’জনের মধ্যে কথা হয়। সূত্রের খবর, সোমবারই আরও একটি কড়া রায় দিতে চলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দু’জনেই সৌজন্য দেখালেও সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, দু’জনের কাজের ক্ষেত্রে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কুণালকে বলেন, ‘‘আপনার বিবৃতিগুলো রোজ দেখি। বাচনভঙ্গি ভাল লাগে।’’ কুণাল জবাবে বলেন, ‘‘আপনার মামলাগুলোর উপরেও নজর রাখি। দলের বিরুদ্ধে আপনার মন্তব্যগুলোর প্রতি আক্রমণ শানাই।’’
পাঁচতারা হোটেলে শুক্রবার ছিল তারকার হাট। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নক্ষত্ররা এসেছিলেন এই সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে। অতিথিদের আপ্যায়নে ছিলেন স্বয়ং প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার। সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অনিন্দ্য জানা ও তাঁর সহকর্মীরা। কলকাতা তথা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নক্ষত্ররা হাজির ছিলেন বর্ণময় সভায়। পায়ে অস্ত্রোপচারের পর বিশেষ প্লাস্টার থাকায় কুণালকে (Kunal Ghosh) বসানো হয়েছিল মঞ্চের প্রথম দিকে দরজার কাছেই। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই আসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সকলেই তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করছিলেন। কিন্তু, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বিচারপতি যেন কাউকে খুঁজছিলেন। পরপর সবাইকে সৌজন্য বিনিময় করতে করতে কুণাল ঘোষের সামনে এসেই দাঁড়িয়ে যান। কুণালও টেবিলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। দেখা যায় হাত ধরে তৃণমূল মুখপাত্রকে কিছু বলছেন। কুণালও হাসতে হাসতে পালটা কিছু উত্তর দিচ্ছেন। মাথা নাড়ছেন।
অনুষ্ঠান শুরুর প্রথম দিকেই অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। কিন্তু, পুরস্কার বিতরণ চলার মাঝপথে দেখা যায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে চলে যাওয়ার আগে তিনি সামনের দিকে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সকলকে সৌজন্য বিনিময় করেন। কুণালের কাছে আসতেই তৃণমূল মুখপাত্র প্রশ্ন করেন, ‘‘কী হল, মাঝপথে চলে যাচ্ছেন?’’ উত্তরে স্মিত হেসে বিচারপতি বলেন, ‘‘যাচ্ছি, একটা বিশেষ কাজ আছে। কোর্টেরই কাজ। কাল একটা অর্ডার দিতে হবে। আপনার আবার কাজ বেড়ে যাবে।’’ এরপর কুণালও হাসিমুখে কিছু উত্তর দেন। তারপর দু’জনেই হাসি হাসি মুখে কথা শেষ করেন। দ্রুত বেরিয়ে যান বিচারপতি। যুদ্ধের বাতাবরণে দু’জনের মধ্যে কী কথা হল তা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে জানিয়েছেন, ‘‘সৌজন্য-আলাপ হল। কথা হল, কিন্তু তা বলার জন্য নয়।’’
দু’জনের এই কথোপকথনের বৃত্তে যাঁরা ছিলেন তাঁরা শুনেছেন, দু’জনের কী কথা হয়েছে। চারপাশের এই সূত্র থেকেই জানা গিয়েছে, কথোপকথনের অংশ বিশেষ। পাশে থাকা রাজ্যের এক শীর্ষস্থানীয় আমলা অবশ্য রাতে বলেছেন, ‘‘দেখে মনেই হচ্ছিল না বিবৃতি-যুদ্ধের বাতাবরণে দু’জনের এমন সৌজন্য-সংলাপ চলতে পারে। আমরা চাই, কাজের ক্ষেত্রে এমন বাতাবরণ থাকলেও তা যেন এমনই সৌজন্যের মোড়কে আবৃত থাকে।’’
‘আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’ আয়োজিত বছরের ‘বেস্ট সম্মান’ প্রদান অনুষ্ঠানে এদিন বসেছিল চাঁদের হাট। সম্মানিত হন বিশ্বভারতীর গবেষক থেকে বিশ্বজয়ী মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য তিতাস সাঁধু, প্রস্থেটিক বিশেষজ্ঞ সোমনাথ কুণ্ডু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিতর্কিত অভিনেত্রী পরিমণি। ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া, সত্যম রায়চৌধুরী, বন্ধন ব্যাংকের চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর ঘোষ, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কোয়েল মল্লিক, সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্ত, শোভন-বৈশাখী, সংগীতশিল্পী অনুপম রায়, জিতু কামাল, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, শুভাপ্রসন্ন প্রমুখ।
এদিন ‘জয় হো’ ও ‘নাটু নাটু’ গান মিশিয়ে একটি বাঙালি জাগো শীর্ষক ফিউশন এই মঞ্চে প্রথম উপস্থাপনা করেন রূপম ইসলাম। এদিন যাঁদের সম্মানিত করা হচ্ছিল তাঁদের প্রত্যেককে পুরস্কার দেওয়ার পর পত্রিকার তরফে একটি বিশেষ প্রশ্ন করা হচ্ছিল। সঞ্চালনায় ছিলেন অনিন্দ্য জানা ও সোহিনী সেনগুপ্ত। এমনই একটি প্রশ্ন থেকে ‘আমেরিকায় সরষের তেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যায়। একটি ভারতীয় রেস্তরাঁয় শেফের কাজ করা রণি মজুমদার পুরস্কৃত হন। তিনি জানান, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরষের তেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু, আমরা আমাদের খাবার সরষের তেল দিয়েই তৈরি করি এবং তা খেয়ে আমেরিকাবাসী তৃপ্ত এবং আহ্লাদিত।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.