ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একদিনে জোড়া পতন। তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary), জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tiwari)। প্রথম জনের বিষয়টি নিয়ে প্রায় স্পষ্ট ধারণা থাকলেও, দ্বিতীয় জনের পদক্ষেপ খানিকটা আচমকাই। দলের সঙ্গে জিতেন্দ্রর সম্পর্কের এতটা অবনতির কথা বোধহয় দলও আঁচ করতে পারেনি। এই জোড়া ধাক্কাকে অবশ্য শাসকদল মোটেও ততটা বিচলিত নয়, অন্তত নেতাদের কথায় তেমনই ইঙ্গিত। বরং দলত্যাগী দুই জনপ্রতিনিধির তীব্র সমালোচনায় মুখর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শুভেন্দু অধিকারীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে ফের তোপ দেগেছেন একসময়ে তাঁর এবং দলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। জিতেন্দ্র তিওয়ারিকেও তীব্র কটাক্ষে বিঁধেছেন তিনি।
মন্ত্রিত্ব ত্যাগের সপ্তাহ দুই পর বিধায়ক পদ এবং তৃণমূল (TMC) ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও দলের তরফে আলোচনার রাস্তা খোলা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বারদুয়েক তাঁর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। তাঁকে বোঝান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। কিন্তু সুরাহা হয়নি। তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় দু দশকের সম্পর্ক ছেদ করেছেন শুভেন্দু। এ নিয়ে সৌগত রায়ের প্রতিক্রিয়া, ”বিশ্বাসঘাতকের মতো কাজ করল। যে সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের বরাবরের লড়াই, সেই দলের কাছেই আত্মসমর্পণ করছে শুভেন্দু। নিন্দার ভাষা নেই।” শুভেন্দুকে ‘সুবিধাবাদী’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা জঙ্গলমহলের জনপ্রিয় নেতা ছত্রধর মাহাতো।
দলের সঙ্গে সামান্য মনোমালিন্যের জেরে শুভেন্দুর পথে হেঁটেই ধাপে ধাপে আসানসোলের পুরপ্রশাসকের পদ, বিধায়ক পদ, তৃণমূল জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরও তৃণমূলও ছেড়েছেন শাসকদলের আরেক প্রভাবশালী নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বৃহস্পতিবার তিনি একই দিনে এতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। জিতেন্দ্রর এই পদক্ষেপ নিয়েও নিন্দায় মুখর সৌগত রায়, কুণাল ঘোষরা। রাজ্যের শাসকদলের বাধায় আসানসোলের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে। জিতেন্দ্রর এই গুরুতর অভিযোগের পর তাঁকে কথা বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই ডাক উপেক্ষা করে তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করে আশ্বস্তও করেন। কথা ছিল, শুক্রবার মমকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কিন্তু তার আগে বৃহস্পতিবারই তিনি দলত্যাগ করায় তীব্র সমালোচনা দলীয় নেতৃত্বের। সৌগত রায়ের মন্তব্য, ”মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে কথা না বলে দল ছেড়ে দেওয়াটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আরেক তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। তাঁর কথায়, ”কাজে অসুবিধা হলে মেয়র পদে থাকাকালীনই কেন ইস্তফা দিলেন না জিতেন্দ্র? এখন পুরপ্রশাসক হিসেবে কেন এসব অভিযোগ তুলছেন?” মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিলে তা তাঁর পক্ষে অনেক সম্মানজনক হতো বলে মত কুণাল ঘোষের। পুরপ্রশাসকের পদত্যাগের নিন্দা করেছেন শিলিগুড়ির বাম পুরপ্রশাসক অশোক ভট্টাচার্যও। তাঁর শ্লেষ, ”বিধানসভায় শিলিগুড়ির বিধায়ক হিসেবে আমি যতবার যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সরকারের শিলিগুড়ির প্রতি বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছি, ততবার জিতেন বাবু আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মমতা সরকার কাউকে বঞ্চনা করে না। আমার সমস্ত অভিযোগগুলো নাকি ভিত্তিহীন! আজ তিনি বঞ্চনার কথা বলছেন!এতো দিন কেন বলেননি?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.