ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবার পত্রযুদ্ধে জড়ালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মঙ্গলবার প্রথমে চার পাতার চিঠি লিখে রাজ্যপাল বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন বলে সমালোচনায় সরব হন তৃণমূলের শ্রীরামপুরের সাংসদ তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পালটা জবাব দিতে চার পাতারই চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে লেখা চিঠির মতোই একই ভাষা এই চিঠিতেও। বলেছেন করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতে কৌশল নিচ্ছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার।
গত কয়েকদিন ধরেই নবান্নের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ চলছে রাজভবনের। সংঘাত চরমে ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরপর চিঠি পালটা চিঠির জেরে। তারপর সাংসদ মহুয়া মৈত্রর আক্রমণ। এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সমালোচনার সুর চড়ান রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। রাজ্যপালও ছাড়েননি। পালটা জবাব তিনিও দেন। রাজনৈতিক নেতা শুধু নন, রাজ্যপালকে আক্রমণ করতে গিয়ে কল্যাণ এদিন আইনজীবীর ভূমিকাই নেন বেশি। বলেন, “আপনার আচরণ আপনার সাংবিধানিক চেয়ারকে সম্মান করে না। মনে হয় আপনি বিজেপির আদর্শে অনুপ্রাণিত। অন্য কোনও উদ্দেশ্যে লাগাতার মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে চলেছেন আপনি।” কল্যাণ আরও লিখেছেন, “রাজ্যপাল পদের অপব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আক্রমণ করে চলেছেন আপনি। করোনা মোকবিলায় প্রধানমন্ত্রী যখন সমস্ত রাজ্যকে একজোট হয়ে লড়াই চালানোর বার্তা দিচ্ছেন, তখন শত্রু মনোভাবাপন্ন আচরণ করছেন আপনি।”
শুধু তাই নয় রাজ্যপাল হীনমন্যতায় ভুগছেন বলেও কটাক্ষ করেন কল্যাণ। বলেন, “রাবার স্ট্যাম্পের বদলে আপনি নিজেকে অতি সক্রিয় রাজ্যপাল বলতেই পছন্দ করেন বেশি। কিন্তু আপনার কার্যকলাপ দেখে মনে হয় আপনি হীনমন্যতায় ভুগছেন। অথবা রাজ্যপালের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার কোনও জ্ঞানই নেই।” এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর নামে মুসলিম তোষণের আরোপ লাগাতে গিয়ে রাজ্যপাল প্রচ্ছন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতাকেই মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন কল্যাণ। এরপর দীর্ঘ চিঠিতে রাজ্যপালের ভূমিকা এবং সেই সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান প্রণেতাদের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন কল্যাণ। প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপালের বারবার সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা নিয়ে। কটাক্ষ করে বলেছেন, “আপনি সব সময় শিরোনামে থাকতে ভালবাসেন এবং খবরে না থাকলে আপনার রাতের ঘুম হয় না। সস্তার জনপ্রিয়তা পেতে ভালোবাসেন। বছর ঘুরলেই যখন বিধানসভা ভোট, তার আগে বিজেপির ভাষায় কথা বলছেন। আপনি বিজেপির মুখপাত্রের মতো ব্যবহার করছেন।”
এরপরই পাল্টা চিঠি দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন রাজ্যপাল। বলেন, “করোনা মোকাবিলার পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা ঢাকতেই কৌশল নিয়েছে রাজ্য সরকার। একজন নেতার ধরনের মিথ্যা প্রতিরক্ষা শোভা পায় না। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা।” কল্যাণের এই চিঠি যে তার দলনেত্রীর দেখানো পথেই, নিজের চিঠিতে সে কথা উল্লেখ করে মৃদু খোঁচাও দিয়েছেন জগদীপ। তবে চিঠির পর পালটা চিঠি দিয়ে যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা রাজ্যপালেরও অজানা নয়। তাই কোন পরিস্থিতিতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে তা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। গত বছর ৩০ জুলাই রাজ্যপালের আসনে বসার পর থেকে কী কী ব্যবহার তিনি পেয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। এবং তার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের ভূমিকাই বা কেমন ছিল তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
একেবারে শেষে রাজ্যপাল বলেছেন, রাজ্যবাসীর ভালর জন্যেই তিনি কাজ করছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে সেই কাজ তিনি ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু তার জন্য রাজ্য সরকারকে সংবিধান মেনে কাজ করতে হবে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। বলেছেন দেশের মধ্যে থেকে আলাদা রাজ্যের মতো ব্যবহার করা অসাংবিধানিক। একই সঙ্গে বলেছেন, “আপনি এবং আপনার দলের প্রত্যেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝান, একাধিপত্যের সময় এটা নয়। পালিয়ে যাওয়ার রাস্তাও কোথাও নেই। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সহযোগিতা করে করোনা মোকাবিলায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করি। তা না হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.