অপরাজিতা সেন: ইডির নোটিসে সাড়া দিয়ে সোমবার দিল্লিতে তাদের দপ্তরে যাবেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC MP Abhishek Banerjee)। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসারদের যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি প্রস্তুত। সম্ভবত রবিবারই দিল্লি পৌঁছে যাবেন তিনি। শুধু তৃণমূল নয়, জাতীয় রাজনীতিতেই চর্চা চলছে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির চিত্রনাট্য অনুযায়ীই ডাকা হয়েছে অভিষেককে।
এর আগেও ইডির ডাকে তাদের দপ্তরে গিয়েছিলেন অভিষেক। অফিসারদের সব প্রশ্নের উত্তর দেন। ইডি দপ্তরে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে বেরোনোর পরেও ইডির (Enforcement Directorate) সামনে দাঁড়িয়েই তাঁর সাংবাদিক বৈঠক গোটা দেশকে বুঝিয়ে দেয়, এসব চাপে চুপ করে যাওয়ার পাত্র তিনি নন। এরপর বাংলার বাসিন্দাকে দিল্লিতে কেন ডাকা হচ্ছে, এনিয়ে দিল্লিতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। সেই আদালতের রায়ের পরেই সঙ্গে সঙ্গে আবার তলবের নোটিস দেয় ইডি। সোমবার অভিষেক এবং মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে (Rujira Banerjee) ডাকা হয়েছে। অভিষেক সোমবার যাবেন। রুজিরার বিষয়টিতে আইনি পরামর্শ নেওয়া চলছে।
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) আক্রমণের পাশাপাশি অভিষেককে তীব্রভাবে টার্গেট করেন বিজেপি নেতারা। কয়লা তদন্তে নাম জড়িয়ে ব্যক্তিকুৎসা শুরু করেন। সেই সঙ্গে এজেন্সি সক্রিয় হয়। সিবিআই, ইডির তৎপরতা দেখা যায়। অভিষেক ইস্পাতকঠিন স্নায়ু দিয়ে সে সব সামলান। বাংলার ভোটের পরেও এখন এই খেলা আবার শুরু হল। বিজেপি নেতাদের একাংশের অঙ্গুলিহেলনে যে এসব হচ্ছে, তা স্পষ্ট। এবার পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের রাতেই যেভাবে বিজয়ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং হঠাৎ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলির কথা বলেছিলেন, বোঝাই যাচ্ছিল উত্তরপ্রদেশপর্ব কোনওভাবে সামলানোর পর এবার প্রতিহিংসার রাজনীতিতে এজেন্সির অপব্যবহার আবার শুরু হচ্ছে। ঠিক সেই ঘটনাই ঘটল।
বাংলায় যখন বিজেপি পরের পর হারছে, সামনে যখন আবার উপনির্বাচন, যখন সংসদে বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে ‘ব্লক’ তৈরিতে উদ্যোগ নিচ্ছে তৃণমূল, ঠিক সেই সময় অভিষেকদের আবার তলব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের দিনই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তৃণমূল (TMC) নেতাদের এজেন্সি দিয়ে হয়রানি শুরু হচ্ছে। তিনি এও বলেছিলেন, “এবার বোধহয় অভিষেকের দুবছরের বাচ্চাকেও ডাকবে।” স্বয়ং অভিষেক আগেও স্পষ্টভাবে বলেছেন তিনি নির্দোষ। যাবতীয় কুৎসার জবাবও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “এক বিন্দু প্রমাণ থাকলে স্বেচ্ছায় ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে মৃত্যুবরণ করব।”
উল্লেখ্য, যে দু’টি বিষয় নিয়ে বিজেপি অভিষেকের বিরুদ্ধে কুৎসা, অপপ্রচার করে, দুটিই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। যেমন-কয়লা দপ্তর। এবং বাংলাদেশ সীমান্ত। যেগুলি কেন্দ্রের অধীন, যা পাহারা দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী, তার কোথাও কোনও ত্রুটি থাকলে দায় কেন্দ্রের। কী করে সেটার সঙ্গে রাজ্যের অন্য কোনও দলের নেতার নাম জড়ানো সম্ভব? যাই হোক, বিধানসভায় যেভাবে শুভেন্দু অধিকারী এক প্রতিবাদী বিধায়ককে বাড়িতে আয়কর হানার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাতে এটা পরিষ্কার যে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করছে।
এদিকে, দিল্লির খবর, অভিষেকের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ইডি তাদের কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে টিম তৈরি করেছে। তাতে গতবারের টিমের সঙ্গে দুজন নতুন মুখ আছেন। প্রশ্নমালাও তৈরি থাকছে। তাতে আগেরবারের সামান্য পুনরাবৃত্তি থাকতে পারে। অন্যদিকে অভিষেক মাথা উঁচু করেই ইডি দপ্তরে যাবেন বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। তিনি একাই যাবেন ইডি দপ্তরে। বিজেপি যে রাজনৈতিক হয়রানির ছক করেই এজেন্সি দিয়ে খেলছে, এটা বুঝে অভিষেকও হিমশীতল মস্তিষ্কে তাঁর রণনীতি সাজাচ্ছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.