সৌম্য মুখ্যোপাধ্যায়: অবশেষে সত্যি হতে চলেছে এতদিন ধরে চলা জল্পনা। আগামীকাল মঙ্গলবার বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভায় হাজির হয়ে তিনি দলবদল করতে চলেছেন বলেই সূত্রের খবর। বর্তমান বঙ্গ রাজনীতিতে বহুলচর্চিত সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর কয়েক হাজার অনুগামীরও।
বিজেপি মুকুল রায়ের সঙ্গে লুচি ও আলুর দম খাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়। এরপর প্রায়শই দলের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। কখনও তিনি দলের বিধায়ক সুজিত বসুর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তো কখনও তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান। এমনকী, এনআরএসকাণ্ডে দলনেত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন সব্যসাচী। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সব্যসাচীকে ‘মীরজাফর-বেইমান’ বলেও কটাক্ষ করেন তাঁর একসময়ের প্রিয় মানুষ ফিরহাদ হাকিম। এমনকী সব্যসাচীকে দল ছাড়ার বার্তাও দেন তিনি।
তবে সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনে কর্মচারী সংগঠনের বিক্ষোভ মঞ্চে যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। এরপরই সব্যসাচীকে ‘চরম শিক্ষা’ দিতে আসরে নামে তৃণমূল। পর বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূল। একে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে যান সব্যসাচী। পরে হাই কোর্টের রায় পক্ষে এলেও বিধাননগরের মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। আর তারপরই সোজা চলে যান সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে। সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করেন। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মেগা সমাবেশকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখানে আন্দোলনকারীদের জন্য পানীয় জল বা বাথরুমের কোনও ব্যবস্থা নেই। আর ২১ জুলাইয়ের জন্য এলাহি আয়োজন করা হয়েছে।’ নাম না করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন, ‘অনশনমঞ্চ থেকে বিকাশ ভবন তো কাছেই। কিন্তু, শিক্ষকরা রাস্তায় আর মন্ত্রী-সেক্রেটারিরা ঠান্ডা ঘরে বসে রয়েছেন।’
এরপর থেকে যত দিন গিয়েছে ততই গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছেন তৃণমূলের এই ডাকাবুকো নেতা। কিছুদিন আগে তাঁর গণেশ পুজোর উদ্বোধনে হাজির ছিলেন অরবিন্দ মেনন, দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের মতো বিজেপি নেতারা। গণেশ পুজোর অনুষ্ঠানে সব্যসাচীর সঙ্গে গান গাইতেও দেখা গিয়েছিল রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে। রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সব্যসাচী বলেছিলেন, ‘এটা সামাজিক অনুষ্ঠান, যে কেউ আসতে পারেন।’ তবে পুজোর মণ্ডপে ছিল গেরুয়া ছোঁয়া। পদ্মফুলের আদলেই তা তৈরি করা হয়েছিল। এমনকী পুরো গণেশ পুজোয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে খোশমেজাজে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছিল রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ককে। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৬৯ জন্মদিন উপলক্ষে সল্টলেকের সিএফ ব্লকে বিশেষ যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানেও অংশ নেন তিনি। তারপর থেকেই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিন এগিয়ে এসেছে বলে অভিমত প্রকাশ করছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আগামীকাল, মঙ্গলবারই সেই দিন বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার এপ্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ করেন সব্যসাচী দত্ত। বলেন, ‘পুজো বোনাস দিলাম।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.