বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ বিজেপি বিধায়কদের। ছবি: অরিজিৎ সাহা
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নীতি আয়োগের বৈঠকে ‘অপমানিত’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিধানসভায় পড়ল তার আঁচ। সোমবার মানস ভুঁইয়া নিন্দা প্রস্তাব পেশ করেন। পালটা বিরোধিতায় সরব বিজেপি। বিধানসভার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট গেরুয়া শিবিরের।
সোমবার বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই সরাসরি নিন্দা প্রস্তাব পেশ করেন মানস ভুঁইয়া। বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ বলেন, “আমরাও কিন্তু এর পর সাংবাদিকদের সামনে কি বলা হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা চাইব।” পালটা মানস ভুঁইয়া বলেন, “অবশ্যই আলোচনা করা যেত যদি নীতি অযোগের বৈঠকে কি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।” এর পর বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন, “তিনি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বোঝা উচিত, যতটা সময় দেওয়া আছে, সেই মতো বলা। তাঁর টার্গেট ছিল, বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। আবারও সুর চড়ান শংকর ঘোষ। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা সত্যের অপলাপ।” এর পরই সুর চড়িয়ে অরূপ বিশ্বাস বলেন,”যে কথা বললেন দীপক বর্মন, তা তাকে প্রমাণ করতে হবে।”
বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বাকবিতণ্ডায় জড়ান। বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আগে কোনও দিন যাননি। তিনি ওখানে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে গিয়েছিলেন। উনি ভিতরে এসব কিছু বলেননি। উনি গিয়েছিলেন একটা সেটিংয়ের চেষ্টায়। ভিতরে যা হয়নি, সাংবাদিকদের সামনে এসে সেই মিথ্যা বলেছেন।” এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন মুখয সচেতক নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের উপর প্রহার চলছে। বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করলে বাংলার মানুষ মেনে নেবেন না। বাংলার মানুষ গর্জে উঠবেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কন্ঠরোধ করা হয়েছে। একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তিনি।” কথা কাটাকাটির মাঝে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। বিধানসভা ওয়াকআউট করেন তাঁরা।
এর পর আসরে নামেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিরোধীরা ভুলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এই হাউসের প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী লিডার অফ হাউস। আমার এক্তিয়ারে আসলে আলোচনা করতে পারি। প্রয়োজনে প্রিভিলেজ হবে।” ফিরহাদ হাকিমও বিজেপি বিধায়কদের ওয়াকআউটের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদে তোপ দাগেন। বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “বাংলার মানুষ যখন ঝামা ঘষে দিচ্ছেন তখন এটাই হবে স্বাভাবিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত বাংলা নিয়ে বলবেন, তত বোধ হবে যে আমরা (বিজেপি) ভুল করেছি। সেই উসকানি যেন বেশি না হয় তাই দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কণ্ঠরোধ করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলতা হ্যায় তো, দিল্লি কাঁপতা হ্যায়। লজ্জায় ওরা ওয়াকআউট করেছে।” স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনি কিছু মনে করবেন না। বিজেপি আঘাতে জ্বলছে। তাই এই যন্ত্রণা, আর্তনাদ। মন কি বাতে আমার কথা বলব। আর মানুষের কথা শুনব না।”
বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ ‘মিথ্যাবাদী’ শব্দ প্রয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই শব্দ কার্য বিবরণী থেকে বাদ দেন স্পিকার। তিনি আরও বলেন, “উনি সংসদীয় কাজ করতে গিয়েছিলেন। ফলে আমি মনে করলে আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারি। মনে করলে প্রিভিলেজ আনতে পারি। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার দরকার হলে প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করা যায়। আমি বিধানসভার নথিতে দেখেছি। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বার্থে ওখানে গিয়েছিলেন। যেভাবে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা অনৈতিক।” বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও বিষয় নিয়ে এই বিধানসভায় আলোচনা করা যায়? স্পিকার জানান, “এর আগে বহু এমন উদাহরণ আছে। ইরান, নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের মতো একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” অশান্তির মাঝে বিধানসভায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.