ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সরাসরি সমর্থক নয়। কিন্তু শুভাকাঙ্খী। কারও আবার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জায়গা আছে। কারও সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে। এখন থেকে সেসব আর কোনও সমস্যাই নয়। এবার থেকে তৃণমূল কংগ্রেস কী করছে, কী তার উদ্দেশ্য, তার সরকারেরই বা কর্মসূচি কী, ফেসবুকে দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে তা জানার সুযোগ এনে দিল তারা। তার জন্য তৃণমূলের সদস্য না হলেও চলবে। দলের ফেসবুক পেজে তার জন্য ‘ফর্ম বিলি’ শুরু করেছে তৃণমূল। তা পূরণ করে জমা দিলেই তৃণমূলের সহযোগী হওয়া যাবে। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত স্তরে মত বিনিময় করে অভিনব পরামর্শও দেওয়া যেতে পারে। পছন্দ হলে, কার্যকরী মনে হলে সেই কৌশলেই কেল্লাফতে। দলের ফেসবুক পেজে গেলেই মিলবে এই ফর্ম। অন্য পোস্টের ভিড়ে হারিয়ে যাতে না যায়, তার জন্য ‘পিন্ড’ করে রাখা আছে। আম জনতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে এই ফর্ম পূরণ করে দিলেই হবে। মেল হোক বা ফেসবুক, সবরকম তথ্য চলে আসবে হাতের মুঠোয়।
রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি দলের প্রচার বাড়াতে বা অপপ্রচার রুখতে সোশ্যাল মিডিয়া এখন অন্যতম অস্ত্র। সেই পরিস্থিতির বিচারে সদ্য সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিপুণ হিসাবে দলের এক কোটি ভোটবৃদ্ধির কৌশল বলে দিয়ে সম-মনোভাবাপন্নদের দলে টানার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ডিজিটাল কনক্লেভের মঞ্চে দাঁড়িয়ে। সেই সূত্রেই এই সোশ্যাল মিডিয়া ফর্ম তৈরির পরিকল্পনা এবং তাকে রূপ দেওয়া। গত কনক্লেভে অভিষেক একটি হিসাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, প্রত্যেক বিধানসভায় ১০০ জন করে সাইবার সৈনিক চান তিনি। সেই হিসাবে ২৯৪টি বিধানসভায় প্রায় ৩০ হাজার। তাঁরা যদি মাসে আট জন করে লোককেও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গী করে নিতে পারেন, তবেই অর্ধেক যুদ্ধ জয়। অভিষেক বলেছিলেন, “যাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে অন্য দলে যাচ্ছেন, বা যাঁরা দল থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন তাঁদের বুঝিয়ে দলে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্য দল থেকেও এই দলে আনতে হবে।” দলের সাইবার সেলের এক শীর্ষনেতা বলছেন, নিপুণ হিসাব। সপ্তাহে দু’জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে তৃণমূলের শুভাকাঙ্খী করে তুলতে পারলে একমাসে আড়াই লক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে সংখ্যাটা। সেখান থেকে এক বছরে ৩০ লক্ষ। একটি পরিবারে তিনজন করে সদস্য হলে এক কোটি ভোটার। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটার যদি হয় তিন কোটি, সাইবারের বাড়তি হিসাব সেই সংখ্যাই এক লাফে আরও এক কোটি বাড়িয়ে দেবে সমর্থন। তবেই না লাভ?
“খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসাব”, বলছেন দলেরই এক শীর্ষ যুবনেতা। তাঁর ব্যাখ্যা, এই মুহূর্তে টেক স্যাভি বলতেই সবার আগে সামনে আসে ছাত্র-যুব সম্প্রদায়। তাদের আঙুলেই ছড়িয়ে পড়ছে ‘সোশ্যাল’ বার্তা। তাদের লক্ষ্য করেই এই কাজ শুরু। তাদের একেকজনের পরিবারে বাবা-মা-সহ থাকতে পারেন আরও সদস্য। তাঁদের প্রত্যেককে তৃণমূলের সহযোগী করে তুলবে যুব-ছাত্ররাই। সেই হিসাবেই বাড়বে সদস্যপদ। বাড়বে সমর্থন। যা ভোটে পরিণত হবে বলে আশা দলের সাইবার সেলের। বিজেপি সাইবার যুদ্ধে প্রথম এ দেশে ঝড় তুলেছিল। সেই পথকে কোনওভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। সেই পথেই কিন্তু সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের নির্দেশ ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। অভিষেক বলেছিলেন, বিজেপির পেজে গিয়ে যুক্তিপূর্ণ জবাব দিয়ে এ রাজ্য নিয়ে যে কোনও অপপ্রচার রুখতে হবে। সেই পথেরই প্রথম ধাপ এই ফর্ম। শুধু পরিকল্পনামাফিক যার সাহায্যে রাজ্যজুড়ে সৈনিক বাড়াতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাইবার সেল। সহযোদ্ধা তৈরির আগে তাই স্রেফ সহযোগী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.