কুণাল ঘোষ: কুন্তল ঘোষ নামে নিয়োগ মামলার এক বন্দি অভিযুক্ত কী লিখেছে, তার উপর দাঁড়িয়ে তড়িঘড়ি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করল সিবিআই। কী তাড়া, কী তাড়া! কোর্ট মিটতে না মিটতেই নোটিস। আবার সে নোটিসে ২৪ ঘণ্টাও সময় দেওয়া নেই। শুক্রবার দুপুরে নোটিস বলছে, শনিবার সকালেই অভিষেককে উপস্থিত হতে হবে। অভিষেক নবজোয়ার যাত্রা থামিয়ে সিবিআই অফিস যাবে। আইনি পদ্ধতি মানছে। এতে ওর উচ্চতা আরও বাড়বে। কিন্তু, সিবিআইয়ের এই পক্ষপাতদুষ্ট অতিসক্রিয়তা আরও কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আনছে।
(১) কুন্তল ঘোষের চিঠির উপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তা হলে সুদীপ্ত সেনের কোর্টে লেখা চিঠির উপর শুভেন্দু অধিকারী গ্রেপ্তার হবে না কেন? সিবিআই আর কত পক্ষপাত দেখাবে?
(২) কুন্তলের চিঠিতে অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। শুধু কথার জাগলারিতে কায়দা করে নাম জড়িয়ে অভিষেককে ডাকার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে, সারদাকর্তার চিঠিতে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। কুন্তল, সুদীপ্ত সেন দু’জনেই জেলবন্দি এবং একই পদ্ধতিতে কোর্টকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সুদীপ্ত সেন যে অভিযোগ করেছেন, সেটি নতুন নয়। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পরেও নয়। এই অভিযোগ ২০১৩ সাল থেকেই সামনে আছে। কেন সিবিআই শুভেন্দুকে গ্রেফতার করছে না? এই গ্রেপ্তারি এড়াতেই দলবদল, সেটা প্রমাণিত।
(৩) যে বিষয়ে তলব, তার এতটা তাড়াহুড়ো সত্যিই দরকার ছিল? এতে কি আরও বেশি করে স্পষ্ট হচ্ছে না যে অভিষেকের জনজোয়ারের চাপেই এখন তাতে বিঘ্ন ঘটাতে এই কাণ্ড হচ্ছে?
(৪) জিজ্ঞাসাবাদে বাধা নেই, এই কথা যদি আদালত বলেও থাকেন; এজেন্সিকে তো ঠিক করতে হবে, আদৌ এই মামলায় অভিষেককে প্রশ্ন করা দরকার কি না। নথিতে ঠিক কীভাবে নামটা রেখে কোর্টের সামনে পেশ করা হচ্ছে, সেটাও দেখার।
(৫) যে মামলায় একজন নেই, স্রেফ আরেকটি চিঠির কোনও কারণে জিজ্ঞাসাবাদ কি এজেন্সির সময় নষ্ট হিসেবে পরবর্তীকালে গণ্য হবে না? যদি হয়, আদালত কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?
(৬) কুন্তলের চিঠির কারণে অভিষেককে তড়িঘড়ি ডাকা হয়। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন প্রসন্ন রায়ের বাড়ি থেকে দিলীপ ঘোষের বাড়ির দলিলের কপি মিললেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় না। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কি চক্ষুলজ্জাও হারিয়েছে?
আমি জানি, বিশ্বাস করি, সিবিআই, ইডিতে বহু দক্ষ, যোগ্য অফিসার আছেন। কিন্তু, কেন্দ্রের বিজেপি এ রাজ্যে তাদের সাংগঠনিক ঘাটতিপূরণ ও পরাজয়ের প্রতিহিংসায় যেভাবে ব্যবহার করছে, তাতে সেই অফিসারদের কিছু করার থাকছে না। সংস্থার নিরপেক্ষতাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে। আপাতত, গোটা বাংলা, গোটা দেশ এটা দেখছে যে তরুণ তুর্কি অভিষেকের কর্মসূচিতে জনজোয়ার চলছিল। তাতে ভয় পেয়ে বিজেপি কৌশলে এই নবজোয়ার যাত্রা মাঝপথে থামাতে চাইছে এসব চক্রান্ত করে। এবং, সবাই এটাও দেখবেন যে সব চক্রান্ত জলে যাবে। শেষ কথা বলবে নবজোয়ারই। সিবিআইয়ের নোটিসের মুহূর্ত থেকে ঠিক যে পদ্ধতিতে, যে ভাষায়, যে শরীরী ভাষায় অভিষেক তাঁর পালটা পদক্ষেপ শুরু করেছেন, যেভাবে ফিরে এসে সিবিআই দপ্তরে যাওয়ার পথে চলেছেন, যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ময়দানে নেমে পড়েছেন, তাতে এই স্নায়ুযুদ্ধে প্রথমেই তৃণমূল কয়েক গোলে এগিয়ে গিয়েছে, সেটা এখনই পরিষ্কার।
বাংলার মানুষ এইভাবে সুপরিকল্পিতভাবে মাঝপথে অভিষককে ফিরতে বাধ্য করা মানবেন না। ঘরবাড়ি ছেড়ে যেভাবে বাংলার জেলায় জেলায় ঘুরছেন অভিষেক, সভা থেকে প্রার্থী বাছাই, রোড শো থেকে মুশকিল আসান, দলীয় কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছেন তাঁর এলাকায় অভিষেকের পদার্পণের। যেখানে সবাই অনুভব করছেন একটি বিরল জনজোয়ার নিয়ে কর্মসূচিতে এগোচ্ছেন অভিষেক, এজেন্সির অতিসক্রিয়তা এবং অপপ্রয়োগে তাকে মাঝপথে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় সম্পূর্ণ উলটো ফল পাবে বিজেপি। যে বা যারা এই নোটিস দেখে উল্লাস করছে তাদের জন্য নিশ্চিতভাবে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক শোকসভা।
বিরোধীরা দেখলাম, অভিষেকের কোর্টে আবেদন নিয়ে নানা কথা বলেছে। এর জবাব একটাই, অভিষেক কোনও জেরা এড়ায়নি। এর আগেও মুখোমুখি হয়েছে এবং তারপর বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলেছে। প্রশ্নটা হল, অকারণ একটা ইস্যু তৈরি করে কেন ডাকা হবে? তার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সবরকম অধিকার অভিষেকের রয়েছে। আর বিরোধীরা এসব সস্তা কথাতেই ব্যস্ত থাকুক। মানুষ যে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই থাকছেন, এজেন্সি ব্যবহার করে বিজেপির এই রাজনৈতিক ঘাটতি পূরণের চেষ্টা বা তাতে সিপিএম-কংগ্রেসের নেতৃত্ব করা মানুষ পছন্দ করছেন না, পরবর্তী সুযোগ এলেই এই বার্তা আবার স্পষ্ট হয়ে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.