Advertisement
Advertisement
TMC

কম ভোট পাওয়া ওয়ার্ডে জনসংযোগে জোর তৃণমূলের, আবাসনে ‘ঘরোয়া’ বৈঠকে কাউন্সিলররা

ইতিমধ্য়েই একাধিক কাউন্সিলর বিভিন্ন বহুতলে ঘরোয়া বৈঠক করে জনসংযোগে নেমেছেন। বাসিন্দাদের বোঝাচ্ছেন তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার উপযোগিতা নিয়ে।

TMC emphasises mass communication to the appartments where party gets less votes in 2024 Lok Sabha Election

ফাইল ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:June 14, 2024 5:21 pm
  • Updated:June 14, 2024 5:21 pm  

কৃষ্ণকুমার দাস: মহানগরের ভোট না দেওয়া বহুতলের ভোটারদের সঙ্গে আরও ‘নিবিড়-সম্পর্ক’ গড়তে অভিনব প্রচার অভিযানে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষ করে কলকাতার যে সমস্ত ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছিল, সেখানকার পাশাপাশি জয়ী ওয়ার্ডের হারা বুথেও জনসংযোগে নয়া কর্মসূচি নিচ্ছেন শাসকদলের কাউন্সিলররা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরাজিত সমস্ত বুথের সম্পন্ন পরিবারের সদস‌্যদের মস্তিষ্কে ‘দলের বক্তব‌্য’ ঢুকিয়ে দিয়ে হারের কলঙ্ক মোছার কাজ শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে বহুতলে ‘পারিবারিক মিটিং’, ‘ইওর কাউন্সিলর ইওর ডোরস্টেপ’, ‘দুয়ারে কাউন্সিলর’ থেকে শুরু করে আবাসনের বাসিন্দাদের তরফে প্রতিনিধি নিয়ে সমন্বয় গড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। সমস্ত পরিকল্পনার নেপথ্যে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে মুখ‌্যমন্ত্রীর ‘ভোট না দেওয়া বাসিন্দাদের মন জয় করার (উইন ওভার) জন‌্য কাজ’-এর বার্তা।

যদিও ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (Councilor) তথা  মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের মতো অনেক পুরপ্রতিনিধি শুধু বহুতলের ফ্ল‌্যাটে ফ্ল‌্যাটে নয়, সম্পন্ন পরিবারের প্রতিটি সদস‌্যর কাছে পৌঁছতে বিশেষ পরিকল্পনা করছেন। পরিসংখ‌্যান বলছে, ২০১৯ সালে কলকাতায় যে সংখ‌্যায় অবাঙালিরা বিজেপিকে (BJP) ভোট দিয়েছিলেন, তার একাংশ এবছর তৃণমূলকে সমর্থন করেছে। বস্তুত সেই কারণে ভবানীপুর, রাসবিহারী, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জের অধিকাংশ ওয়ার্ডে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার ব‌্যবধান গতবছরের তুলনায় অনেকটাই কম।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মায়ের গয়না ‘লুঠ করে’ নতুন বাইক! বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু যুবকের]

ভবানীপুরের (Bhawanipur) ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম বসু বৃহস্পতিবার রাতেই চক্রবেড়িয়ার ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ আবাসনে গিয়ে আবাসিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন। বাসিন্দাদের বক্তব‌্য, ‘‘কাউন্সিলর নন, উনি আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সদস‌্য, তাই এটাকে ভোটের পর ‘পারিবারিক মিটিং’ বলতে পারেন।’’ মূলত অবাঙালিদের বাস এই এলাকার আবাসনেই নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর বাইরে থেকে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা বোতল ছুড়েছিল। অভিযোগ, ওই আবাসনের অধিকাংশ বাসিন্দা নাকি বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এদিনের বৈঠকে অসীম বলেন, ‘‘শুধু শুধু আপনারা ভোট নষ্ট করলেন। যাঁকে ভোট দিলেন তাঁকে তো চেনেন না, আর কোনওদিন এখানে আসবেনও না। সেই তো জিতলেন মালা রায়, মার্জিনও বাড়ল তৃণমূলের (TMC)। তবে আপনাদের পাশে আগেও আমরা ছিলাম, এখনও থাকব।’’ অসীমের এমন কথায় অবাঙালিরা যে অনেকেই মুগ্ধ, তার প্রমাণ গতবারের ৪৭০০ ভোটের ব‌্যবধান কমে ৩৬০০ ভোটে পিছিয়েছে।

অন্যদিকে, ভবানীপুরের ৭২ নম্বরের কাউন্সিলর সন্দীপরঞ্জন বকসি বুথভিত্তিক পর্যালোচনা করে দেখছেন, বনেদি বাঙালি ও সম্পন্ন পরিবারের একটা অংশের ভোটে অনীহা। অনেকে ভোট দিতে আসেননি। ওয়ার্ডে ৪৫ শতাংশ অবাঙালি ভোটারদের কাছে দলের বার্তা পৌঁছতে বিশেষ জনসংযোগ কর্মসূচি নিচ্ছেন সন্দীপ বকসি। মধ‌্য কলকাতার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ সন্দীপন সাহা অবশ‌্য স্বীকার করেছেন, ‘‘উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ‌্যবিত্তরা অনেকেই যেমন শেয়ার-কোম্পানির লভ‌্যাংশের জন‌্য মোদিকে (Narendra Modi) ভোট দিয়েছেন, তেমনই নিম্ন আয়ের অবাঙালিদের একাংশ রামের নামে পদ্মফুলে সমর্থন করেছেন। পৃথকভাবে এদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হচ্ছে।’’ তবে বহুতলের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছতে সবাইকে ছাপিয়ে অভিনব প্রস্তুতি নিয়েছেন ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৌরভ বসু। বলেন, ‘‘আমার দুটি ছোট বসতি ছাড়া সবই বহুতল। জুলাই মাস থেকে প্রতি শনিবার করে দুটি বুথে বহুতলের সামনে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসব। ‘কাউন্সিলর অ‌্যাট ডোরস্টেপ’ চালু হচ্ছে। তার আগে বহুতল আবাসনের সমস্ত ফ্ল‌্যাটে ফ্ল‌্যাটে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে, কবে কোথায় বসব। সারাদিন নিজেই মাইক নিয়ে প্রচার করব। চেষ্টা করব, অন্তত বুথ পিছু ৫০টি করে ফ্ল‌্যাটে (Flat) জনসংযোগ গড়তে।’’

কলকাতার অন‌্যতম প্রবীণ মেয়র পারিষদ (MIC) তারক সিং। তিনি নিজে পুরভোটে জিতেছিলেন ৮২৭৫ ভোটে, কিন্তু এবার ওয়ার্ডে মালা রায় জিতেছেন মাত্র ৮০ ভোটে। জিতেছেন তারকের কন‌্যা ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণা সিং ৯১ ভোটে জিতেছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তারক দাবি করেন,‘‘শুধু আমার ওয়ার্ড নয়, কলকাতার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই গতবারের চেয়ে তৃণমূল প্রার্থীর অবাঙালি ভোট বেড়েছে। বহু বাঙালি প্রধান এলাকায় উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চমধ‌্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা এবছর জোড়ফুলকে ভোট দেননি।’’ জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়কে (Partha Chatterjee) নিশানা করে তারকের অভিযোগ, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা চাকরিজীবী বাঙালি ভোটে প্রভাব ফেলেছে। আলিপুরের ৭৪ নম্বরের কাউন্সিলর বরো চেয়ারম‌্যান দেবলীনা বিশ্বাস কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘বহুতলের বাসিন্দারা যখন যে ধরনের পরিষেবা চান সেটাই সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে দেই আমরা। ওঁদের সমস্ত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে হাজির থাকি। তবু দিল্লি দেখে, শেয়ার-কোম্পানির ব‌্যবসার জন‌্য ভোট দিয়েছেন মোদিকে।’’

[আরও পড়ুন: সাংসদ হতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা? জমি মামলায় ইউসুফকে নোটিস বরোদা পুরসভার]

গতবারের চেয়ে এবার এই ওয়ার্ডে অবাঙালিরা বেশি সংখ‌্যায় তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। গতবার ৪৬৩০ ভোটে হারা ওয়ার্ড এবার পিছিয়ে ছিল ২৪১২ ভোটে। দেবাশিস কুমারের ৮৫ ওয়ার্ডে গতবার ১৯০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এবছর কাউন্সিলরের জনসংযোগে অবাঙালিরা অনেকেই জোড়াফুলে ভোট দেওয়ায় ব‌্যবধান কমে মাত্র ৮০২ ভোটে হার হয়েছে। সাউথ সিটি, যোধপুর পার্ক, লেক গার্ডেন্সের ৯৩ ওয়ার্ডে গতবার ১৭৭৮ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এবার তা কমে মাত্র ৫১ ভোটে পিছিয়েছেন মালা রায়। নিউ আলিপুরের ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩৪৪ ভোটে হারা ওয়ার্ডে এবার অবাঙালিদের একাংশ তৃণমূলকে ভোট দেওয়ায় মালা রায় পিছিয়ে ছিলেন ১ হাজার ৪৪ ভোটে। ‘আরবানা’র মতো বহুতল আবাসনের ধাক্কায় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার তৃণমূল হেরেছিল ৩৯৭৫ ভোটে। কিন্তু এবছর কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ পরিশ্রম করে ব‌্যবধান কমানোয় মাত্র ৬৩৯ ভোটে হেরেছেন মালা রায়। তবে ওই বহুতলেও জনসংযোগের নয়া কৌশল নিচ্ছেন সুশান্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement