স্টাফ রিপোর্টার: সিআইএসএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়বহুল কেন্দ্রীয় বাহিনীর যথেচ্ছ ব্যবহার করে ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুর আর সন্দেশখালির অসংখ্য বিজেপি কর্মীকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। সেই তথ্য সামনে এনে বিজেপিকে নিশানা করল তৃণমূল কংগ্রেস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আচমকা নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়াতেই বিষয়টি জানাজানি হয়। তৃণমূলের বক্তব্য, যাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল, তাদের নিরাপত্তা দরকার নেই বুঝেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সেই বাহিনী প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। আর সেই নির্দেশ বেরতেই সন্দেশখালি আর পূর্ব মেদিনীপুরে ভোটের আগে বিজেপি যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা ফাঁস হয়ে গেল বলে তোপ দাগল তৃণমূল। তাদের কথায়, মানুষের সমর্থন না পেয়ে বিজেপি কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে একেবারে গ্রামাঞ্চল থেকে লোকসভা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে তার আসল ছবিটা বেরিয়ে পড়ল।
গোটা তালিকাটা এক্স হ্যান্ডলে প্রথম পোস্ট করেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। সঙ্গে সিআইএসএফের জারি করা সেই বিজ্ঞপ্তি। তাতে লেখা, এ রাজ্যে বেশ কিছু ব্যক্তিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সিআইএসএফকে নির্দেশ দেওয়া হয় সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার জন্য। সেই মতো ৩ সেপ্টেম্বর থেকে নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হল। কুণাল বলেন, “কী পরিমাণে বিজেপি নেতাদের বাহিনী দেওয়া হয়েছিল সেটা আমরা জানতে পেরেছি। বিপুল সংখ্যায় বিজেপি নেতা-কর্মীরা এই নিরাপত্তা পেত। একটা বিজ্ঞপ্তি সামনে এসেছে তাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ২৪ জনের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হল বলে জানা যাচ্ছে। তবে আরও অনেকের এখনও নিরাপত্তা আছে। এই সংখ্যাটাই সন্দেশখালির ক্ষেত্রে ছিল ১৩।” কুণালের তোপ, “এদের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া দেখে মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কোনও দাম নেই। এরা কারা? কীসের ভিত্তিতে এই বাহিনী পেতে পারে? কেন্দ্রীয় সরকার এখন মনে করছে, এদের নিরাপত্তা দরকার নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক স্বীকার করছে। কিন্তু কাদের সুপারিশে কেন এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল? জওয়ানদের দিয়ে নানা পরিকল্পনা ছিল। এখন সব প্রত্যাহার হল।” অর্থাৎ স্পষ্ট নিশানায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিরোধী দলনেতার জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও ভোটের আগে শিরোনামে আসা সন্দেশখালির বহু লোককে, অধিকাংশই বিজেপি নেতাকর্মী, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এখন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক নির্দেশে এঁদের সবার নিরাপত্তা একসঙ্গে তুলে নেওয়া হল। pic.twitter.com/ODghFNtmkh
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) September 7, 2024
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ২৪ জন আর মূলত সন্দেশখালি-সহ উত্তর ২৪ পরগনার ১৩ জনের। তার তালিকাও প্রকাশ করে দেওয়া হয়। তৃণমূলের বক্তব্য, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির নেতা-কর্মীরা মূলত শুভেন্দু অধিকারীর ইঙ্গিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা উপভোগ করছিলেন। ভোটকে প্রভাবিত করার জন্য কার্যত যা খুশি করার ছাড়পত্র দিয়ে রাখা ছিল মূলত পটাশপুর, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, ভূপতিনগরের নেতাদের। তাঁদের সুরক্ষিত রাখতে বিজেপি তাই বাহিনীর এক্স ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাচ্ছিলেন এমন কিছু নেতা-কর্মী।
অন্যদিকে, সন্দেশখালির একটা বড় অংশের পাশাপাশি ন্যাজাট, দত্তপুকুরের বিজেপির কিছু কর্মী-সমর্থককেও এই নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল। লোকসভা নির্বাচনে টাকা ছড়িয়ে, পরিবেশ উত্তপ্ত করে, গোটা দেশের নজর ঘুরিয়ে সন্দেশখালি জয়ের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। বারবার সেই সব ভিডিও প্রকাশ্যে এসে পড়ায় ফাঁস হয়ে যায় বিজেপির মিথ্যাচার। সিআইএসএফের নিরাপত্তার তালিকা প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা যায়, যে ১৩ জনকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল তারা সবাই প্রায় সন্দেশখালির বাসিন্দা। তৃণমূলের অভিযোগ, যে সন্দেশখালির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি বিদ্বেষ বিষ ছড়ানোর কাজ করছিল, সেই সন্দেশখালির কিছু কর্মী-সমর্থককে পালটা সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল বিজেপির তরফে। দুটি ক্ষেত্রেই প্রত্যেক নেতার সঙ্গেই থাকত দুই সশস্ত্র জওয়ান। অবশেষে তাদের তুলে নেওয়া হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.