ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সপ্তাহজুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের টানাটানিতে যখন রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, বৈশাখী উষ্ণতার সেই আবহেই তৃণমূলের শুভেচ্ছা নিয়ে পৌঁছল ‘হনুমান’!
একদম চুপিসারে। পয়লা বৈশাখ আর অক্ষয় তৃতীয়ার হালখাতায়। কোল্ড ড্রিঙ্ক শেষে লাড্ডুর বাক্স আর ভুজিয়ার প্যাকেটের ফাঁকে। ক্যালেন্ডারের তেল চুকচুকে পাতায় লাখে লাখে ছবি ছাপা হনুমানের। বাঁধন খুলতেই তারা ঢুকে পড়ল বাংলার ঘরে ঘরে।
এমন ক্যালেন্ডার, মিষ্টির বাক্সর সঙ্গে শুভেচ্ছা তৃণমূলে প্রতিবারই পাঠায়। কিন্তু এবার একটু যেন ঘরপোড়া গন্ধ! দলের প্রথম সারির নেতাদের গলাতেও তাই চাপা সুর। বাড়তি উৎসাহ না দেখিয়ে মুখে শুধু শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর কথা বলেও সতর্ক পদক্ষেপ। নিঃশব্দে বাংলার ঘরে তাই পৌঁছে গেলেন বজরংবলী। এভাবে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দলের একাধিক নেতা৷
এক প্রথম সারির নেতা জানিয়েছেন, “প্রতিবারই আমরা বাংলা নববর্ষের শুরুতে মানুষের কাছে শুভেচ্ছা পাঠাই। মিষ্টি থাকে। কখনও থাকে ক্যালেন্ডারও। এবার সেই ক্যালেন্ডারেই একটু বাড়তি মাত্রা যোগ করে দেওয়া হয়েছে।” বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধিরা এই কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত থাকেন। তাঁরাই তাঁদের প্রতিনিধি মারফত এই শুভেচ্ছা পাঠান। গরিব-গুর্বো ঘরে এভাবেই শুভেচ্ছা পাঠানো হয়েছে। কারণ কোনও দোকানে গিয়ে হালখাতা করা তাঁদের হয়ে ওঠে না। আর মধ্যবিত্ত বা সমাজের উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি সামনে আসেননি৷ সরাসরি মিষ্টি-ক্যালেন্ডারও পাঠাননি। দল মনে করেছে, তেমনটা হলে জুটতে পারে নাক সিঁটকানি। মূলত বাজার কমিটি বা এলাকার সোনাপট্টিগুলিতে অনেকটা নির্দেশের আকারেই মিষ্টির প্যাকেটে বজরংবলীর ছবি ছাপানো এমন ক্যালেন্ডার ঢুকিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। সেই হুকুমই তামিল করা হয়েছে মাত্র৷
রামনবমী থেকে রাজ্যে সংঘর্ষের পালা শুরু৷ সঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি প্রবল চাপানউতোর। হনুমানজয়ন্তীতে যে জন্য বাড়তি উৎসাহে আগেই পথে নামে তৃণমূল। বিজেপির চাপে পড়ে রাজত্ব বাঁচাতে তৃণমূলকেও ধর্মের ধ্বজা তুলতে হল বলে সে সময় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএম-কংগ্রেস। সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও তৃণমূল চুপিসারে বাঙালির সঙ্গে সৎসঙ্গের পরিবেশ বজায় রেখে চলেছে৷ পয়লা বৈশাখ বা অক্ষয় তৃতীয়ায় তৃণমূল কোনও দলীয় কর্মসূচি করছে কি না, জানতে চাওয়া হলে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, বাড়তি কিছুই নয়। মানুষকে আমরা ন্যূনতম শুভেচ্ছাটুকু জানাব৷ বস্তুত, বিজেপির চাপে হোক বা না হোক, ধর্ম নিয়ে তৃণমূল বাড়াবাড়ি করছে, এই খোঁচা আর শুনতে চাইছিল না রাজ্যের শাসকদল। শুভেচ্ছার সেই বীর হনুমানই এবার একেবারে নিঃশব্দে বাঙালির ঘরে গিয়ে হাজির হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.