Advertisement
Advertisement

Breaking News

Recruitment Scam

র‌্যাঙ্ক জাম্পিং, নম্বর বিকৃতি থেকে মনীষা অন্তর্ধান! বাম জমানায় তিন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তৃণমূলের

নতুন করে মনীষাকাণ্ডের ফাইল খোলার দাবি জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ।

TMC alleges huge scams in recruitments during left regime | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:March 23, 2023 8:56 am
  • Updated:March 23, 2023 8:56 am  

স্টাফ রিপোর্টার: বামজমানায় শিক্ষাক্ষেত্রের নিয়োগে তিন ভয়ংকর কেলেঙ্কারি রীতিমতো তথ‌্য তুলে ফাঁস করল তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে দু’টি ক্ষেত্রের দুর্নীতি হাই কোর্টের নির্দেশেই সংশোধন করে প্রকৃত দাবিদারদের নিয়োগ করেছে রাজ্য। তৃতীয় অভিযোগটি আরও মারাত্মক, কলকাতা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ‌্যায়ের অন্তর্ধান রহস‌্য।

বুধবার বামজমানায় শিক্ষাক্ষেত্রের তিন বড় কেলেঙ্কারি ফাঁস করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, “র‌্যাঙ্ক জাম্পিং, পরীক্ষার নম্বর বিকৃতির অজস্র ঘটনা ঘটেছে। বছরের পর বছর মামলা চলার পর হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে সুবিচার পেয়েছেন বামনেতাদের চক্রান্তে বঞ্চিত ও প্রতারিত চাকরিপ্রার্থীরা। কলকাতা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের এক মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা এতটাই চরমে পৌঁছয় যে শেষে কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ওই সহকারী পরীক্ষানিয়ামক উধাও হয়েছেন।’’ তৃণমূলকে টার্গেট করে কুৎসা করা বামনেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে এদিন ফের মনীষাকাণ্ডের তদন্ত নতুন করে শুরুর দাবিও করেছেন কুণাল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অয়নের সঙ্গে কবে আলাপ? কেমন ছিল সম্পর্ক? মুখ খুললেন বান্ধবী শ্বেতা]

অন‌্যদিকে, বিধায়ক মদন মিত্রও মনীষার অন্তর্ধান নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মনীষার মা চিনুদেবী আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন, বিমান বসু বাইরে গেলে মনীষাকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন‌্য চাপ দিতেন।’’ নিয়োগ নিয়ে রাজ‌্য সরকারকে আক্রমণ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) এক কটাক্ষের জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল বলেন, ‘‘বামজমানায় সিপিএম নেতাদের পরিবার, পরিজন, আত্মীয়দের মধ্যে কে কতগুলি সরকারি চাকরি ও শিক্ষকের নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর তালিকা দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক আলিমুদ্দিন।’’

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে কিছু অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই ও ইডি তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ও কয়েকজন আধিকারিক গ্রেপ্তারও হয়েছেন। পার্থ ও মানিককে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তৃণমূলের দুই নেতা কুন্তল ও শান্তনু গ্রেপ্তার হলে দল বহিষ্কার করেছে। বুধবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘পরিকল্পিতভাবে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতেই একতরফা নেতিবাচক প্রচার হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি কোর্টে গিয়ে বিজেপির ভাষায় কথা বলছে। এমনভাবে বলা হচ্ছে যে এই প্রথম বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু বামজমানায় শিক্ষায় নিয়োগ শুধু চিরকুটে লিখে চাকরি হয়নি, ভূরি ভূরি বেনিয়ম হয়েছে। হাই কোর্টে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর বিচারপতির নির্দেশে প্রকৃত দাবিদারকে নিয়োগ করতে হয়েছে।’’

এর পরই তৃণমূল মুখপাত্র তিন কেলেঙ্কারির তথ‌্য তুলে বলেন, প্রথমটি হল- র‌্যাঙ্ক জাম্পিং। কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় র‌্যাঙ্ক জাম্প করে অন‌্য একজনকে তাঁর পদে নিয়োগ হয়েছে বলে ১৯৯২ সালে অভিযোগ করেন ড. আশিস পাল। ১৯৯৫ সালে হাই কোর্টে রিট করেন, টানা মামলা চলার পর পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসতেই আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে চাকরি পান আরামবাগ নেতাজি কলেজে। দ্বিতীয় অভিযোগ, প্রফেসর সাবেরা খাতুনের কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় নম্বর বিকৃতি। ২০০৯ সালে তিনি বাম নেতাদের চক্রান্তের শিকার হন। পরে তিনি আরটিআই করেন। তখন সেখানেও ভুল তথ‌্য দেয় রাজ‌্য সরকার। কিন্তু সেখানে বিন্দুমাত্র না দমে সাবেরা মামলা করেন হাই কোর্টে। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১২ সালে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে চাকরি পান তিনি। প্রমাণ হয়ে যায়, পরীক্ষার নম্বরে ‘ট‌্যাম্পারিং’ অর্থাৎ নম্বর বিকৃতি করেছিল বাম সরকার।

[আরও পড়ুন: ‘SET পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলাম, বাবা করিয়ে দেয়নি’, নিন্দুকদের জবাব দেবলীনা কুমারের]

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে বেশ কয়েকজন মহিলার নাম জড়িয়ে বিরোধীরা উদ্দেশ‌্যপ্রণোদিতভাবে রসালো কুৎসা প্রচার করছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টির ইঙ্গিত করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘যোগ‌্যতা না থাকা সত্ত্বেও সিপিএমের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ থাকার সুবাদে মনীষা মুখোপাধ‌্যায়কে সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক নিয়োগ করা হয়েছিল। এই ঘনিষ্ঠতার খবর প্রকাশ্যে আসতেই আচমকা তিনি উধাও হয়ে যান। পরে মনীষার মা চিনুদেবী তৎকালীন মুখ‌্যমন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। হাতে ছিল সিপিএম শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মনীষার একগুচ্ছ ছবি। সবার কাছেই চিনুদেবীর আর্তি ছিল, ফিরিয়ে দাও আমার মেয়েকে। কিন্তু কেউই আজ পর্যন্ত মনীষা জীবিত না মৃত তাঁর সন্ধান দিতে পারেননি।’’ বিষয়টি নিয়ে ১৯৯৬-৯৭ সালে চিনুদেবীকে সামনে রেখে মদন মিত্রর নেতৃত্বে আন্দোলন হয়। এদিন সেই ঘটনা উল্লেখ করে মদন মিত্র বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মনীষা অধ‌্যাপক ছিলেন না, কিন্তু তাঁকে এক ধাক্কায় ডিন করে দিয়েছিলেন বিমান বসু (Biman Bose) ও প্রয়াত অনিল বিশ্বাস (Anil Bishwas)। দরকার হলে আমি কোর্টে যেতে রাজি আছি।’’ এখন কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে ফাঁকা ওএমআর শিট নিয়ে হইচই হচ্ছে। কিন্তু সেই সময় স্বয়ং মদন মিত্র চিনুদেবীকে সঙ্গে নিয়ে সশরীরে মনীষার ফ্ল‌্যাটে গিয়ে এক লক্ষের বেশি ফাঁকা মার্কশিট উদ্ধার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক লক্ষ সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ফাঁকা সই করা মার্কশিট পেয়েছিলাম মনীষার ফ্ল‌্যাটে। বস্তাভর্তি করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের অভিযোগ নেয়নি। আসলে অভিযোগ জানাব কীভাবে, তখন তো সিপিএমের হুকুম ছাড়া থানার গেট দিয়েই কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না।’’

শিক্ষাক্ষেত্রে বাম জমানার তিন কেলেঙ্কারি ফাঁস করে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, এমন অসংখ‌্য তথ‌্য এবং অকাট‌্য প্রমাণ রয়েছে আমাদের হাতে। কাচের ঘরে বসে সিপিএম (CPIM) নেতারা ঢিল ছুড়ছেন। আমরা জানতে চাই, কেন ২০ বছর ধরে নিজের প্রাপ‌্য পেলেন না ড. আশিস পাল? কেন সাবেরা খাতুনের নম্বর বিকৃতি করে তিন বছর চাকরি না দিয়ে হয়রান করা হল? মনীষা কি আদৌ বেঁচে আছেন? ফের মনীষার তদন্তের ফাইল খোলা হোক বলেও দাবি করেন তৃণমূল মুখপাত্র। দাবি করেন, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যদি করতেই হয় তবে আশিস পাল ও সাবেরা খাতুনদের সময় থেকেই দুর্নীতির নেপথ্যে থাকা নেতাদের নাম প্রকাশ্যে আসুক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement