Advertisement
Advertisement

Breaking News

অবশেষে ইমাম পদ থেকে অপসারিত বরকতি

ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক বেআইনি কাজ করার অভিযোগ রয়েছে বরকতির বিরুদ্ধে৷

Tipu Sultan Mosque Imam Barkati who threatened 'Jehad', terminated
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 17, 2017 11:14 am
  • Updated:May 17, 2017 11:36 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতিকে৷ বুধবার  এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড৷ যদিও বরকতি জানিয়েছেন, তিনি এই সিদ্ধান্ত মানেন না৷

[বুধবারই বরখাস্ত হতে চলেছেন বরকতি!]

টিপু সুলতান মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান শাহজাদা আনোয়ার আলি শাহ মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন, ইমাম পদ থেকে বরকতিকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে৷ আইনজীবীদের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের কথা চলছিল৷ বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে বরকতিকে অপসারিত করার ঘোষণা করা হয়। একের পর এক ফতোয়া জারি, বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলিম সমাজকে খেপিয়ে তোলা ও কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করে বিতর্ক বাড়ানোয় বরকতিকে সরানো হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷

Advertisement

press sangbad pratidin

সূত্রের খবর, ১৯৮৮-র পয়লা ডিসেম্বর থেকে পেশ ইমাম হিসাবে বরকতিকে সবেতন নিযুক্ত করা হয়৷ প্রায় ২০ বছর ধরে টিপু সুলতান মসজিদের একক কর্তৃত্ব ছিল বরকতির হাতে৷ মুসলিম সমাজে ও রাজ্য রাজনীতিতেও তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম৷ কিন্তু লালবাতি ইস্যুকে সামনে রেখে বরকতি বেপরোয়াভাবে ধর্মীয় বিভেদ উসকে দেন বলে অভিযোগ ট্রাস্টি বোর্ডের। নানা কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ৷ তারই জেরে এবার টিপু সুলতান মসজিদ থেকে বরকতিকে বিদায় নিতে হল হল।

[বরকতি-সিদ্দিকুল্লাহ সমর্থকদের হাতাহাতিতে রণক্ষেত্র টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর]

শুধু লালবাতি নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেও মুসলিম সমাজে কোণঠাসা হয়ে পড়েন৷ তবে লালবাতি ইস্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে৷ নয়া কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বরকতি জানান, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিনি এই অনুমোদন পেয়েছেন৷ এছাড়া বর্তমান সরকারও তাতে সম্মতি দিয়েছে৷ তাঁর দাবি ছিল, খোদ মোদি এলেও তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি খুলতে পারবেন না৷ এখানেই শেষ নয়, ধর্মীয় বিভেদ উসকে তিনি বলেন ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইলে, মুসলিমরাও পাকিস্তান চাইবে৷ এহেন মন্তব্যের পরই ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ৷ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির নেতৃত্বে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সভার৷ সেখানে মসজিদের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, ইমামের বক্তব্যের সঙ্গে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সহমত নয়৷ ইমাম আরএসএস-এর হাত শক্ত করছে বলেও অভিযোগ করা হয়৷ মুসলিমরাও ভারত চায়, পাকিস্তান চায় না বলেই সাফ জানানো হয়৷

কেন্দ্রীয় আইন অগ্রাহ্য করে গাড়িতে লালবাতি লাগানো ও বরকতির দেশবিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান মসজিদের বাইরে পথসভা করেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি৷ ওই সভা থেকে উলেমা-এ-হিন্দ নেতৃত্ব বার্তা দেয়, বরকতির মতো যাঁরা দেশের বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রতি সমব্যথী, তাঁরা যেন পাকিস্তানে চলে যায়৷ ভারতের একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও দেশের অখণ্ডতার উপর আঘাত নেমে আসতে দেবেন না৷ এ রাজ্যের মুসলিমরা এ দেশের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি৷ যে শিক্ষা স্বামী বিবেকানন্দ দিয়েছেন, যে শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন, সেই শিক্ষা এ রাজ্যের হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বার্তা শিখিয়েছে৷

[প্রবল চাপের মুখে গাড়ি থেকে লালবাতি খুললেন বরকতি]

ওই সভায় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বক্তব্য পেশ করার সময় তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে বরকতি সমর্থকদের হাতাহাতি লাগে৷ ওই সভা চলাকালীন বরকতি টিপু সুলতান মসজিদে ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেন সিদ্দিকুল্লাহর সমর্থকরা৷ সেই সময় বরকতিও সিদ্দিকুল্লার উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেন৷ তখনই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়, লেগে যায় হাতাহাতি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অশান্তি থামায়৷ বরকতিকে মসজিদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে। এই ঘটনার পর বরকতি বউবাজার থানায় সিদ্দিকুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন৷

একের পর এক ফতোয়া জারি, বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলিম সমাজকে খেপিয়ে তোলা ও কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করে বিতর্ক বাড়ানোয় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ৷ বরকতিকে ইমামের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করল মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড৷ কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বে়ড়ানোর জন্য বরকতিকে গ্রেপ্তার করার দাবি তোলে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-কে তাঁর একান্ত প্রতিক্রিয়ায় জানান, বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার জন্যই বরকতিকে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর আগে বরকতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন, ভারত-বিরোধী বক্তব্য প্রকাশ্যে পেশ করেন বলে অভিযোগ করেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত হুঙ্কার দিয়ে জানায়, প্রশাসন ও পুলিশ বরকতিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাঁরাই ওই সংখ্যালঘু নেতাকে তুলে লালবাজারে দিয়ে আসবেন। ঘরে-বাইরে চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য শনিবার গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলতে বাধ্য হন বরকতি৷

 

[আর ইমাম নয় বরকতি, ঘোষণা টিপু সুলতান মসজিদ কর্তৃপক্ষের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement