ছবি: প্রতীকী।
গৌতম ব্রহ্ম: ২০১২-র এপ্রিল-মে মাস। রাজ্যে পঞ্চাশের বেশি প্রাণ কেড়েছিল বজ্রাঘাত। ২০১৮-র জুন পর্যন্ত বাজের বলি ২৮। চলতি বছরেও পশ্চিমবঙ্গে বজ্রসন্ত্রাস অব্যাহত। ছাড় পায়নি কলকাতাও। ২০১৮-র ১০ জুন রবীন্দ্র সরোবরের বিবেকানন্দ পার্কে বাজের থাবায় দেবব্রত পাল নামে এক তরুণ ক্রিকেটারের প্রাণ গিয়েছিল। একই দিনে দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া পার্কের এক চারতলা বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। খলনায়ক সেই বজ্রপাত। আর শুক্রবার ফের শহর কলকাতা সাক্ষী রইল কালান্তক বজ্রসন্ত্রাসের। এবারের ঘটনাস্থল মহানগরের অন্যতম দ্রষ্টব্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর। যাতে প্রাণ গেল এক যুবকের, জখম হলেন শিশু-মহিলা মিলিয়ে ১৬ জন।
বস্তুত ইদানীং বৃষ্টির সঙ্গে মুহুর্মুহু বাজের দাপট যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে। যেখানে-সেখানে ঘটে যাচ্ছে বিপর্যয়। আগে যে সব ঘটনা গ্রামেগঞ্জে শোনা যেত, এখন তা খাস শহরেও নিত্যনৈমিত্তিক। ফলে মেঘ ঘনালেই বুক দুরুদুরু। বাঁচার কোনও উপায় নেই? এমতাবস্থায় ‘থার্টি-থার্টি রুল’ মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যার মোদ্দা কথা, আকাশ চিরে বাজের ঝিলিক দেখার ৩০ সেকেন্ড বা তার আগে মেঘগর্জনের শব্দ কানে এলে বুঝতে হবে, বজ্রগর্ভ মেঘ আপনার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এক দফায় পরপর কয়েকটি বাজ পড়ার ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিপদ থাকে। ততক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে। উপরন্তু ঝড়বৃষ্টির সময় মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠলে জানবেন, আপনাকে ঘিরে পজিটিভ চার্জ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আপনার বজ্রাহত হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। তখন খোলা জায়গা ছেড়ে দ্রুত লোকালয়ে চলে আসা দরকার। একান্তই তা সম্ভব না হলে হাঁটু গেড়ে বসে দু’টি গোড়ালিকে পরস্পরের সঙ্গে ঠেকিয়ে উবু হয়ে মাথা নিচু করে বসতে হবে, দু’হাত মাথার পিছনে রেখে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়। প্রথমত, যাঁরা বাড়ির বাইরে, তাঁরা পুকুর, উঁচু গাছ, বৈদ্যুতিক পোস্ট থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। একসঙ্গে অনেকে খোলা জায়গায় থাকলে জটলা করবেন না। পরস্পরের সঙ্গে ২৯ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেককে আগের মতো মাথা নিচু করে উবু হয়ে বসবেন। বাড়িতে থাকলে বজ্রপাতের সময় ধাতব জিনিসে হাত দেবেন না। ইলেকট্রিক বোর্ড থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন।
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রথম বজ্রপাতের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মত, মেঘের রাজ্যে থাকা বজ্র-নালায় হঠাৎ হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে প্রায় ২০,১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় এক ধরনের শক-ওয়েভ, যা তাপমোচনের তাগিদে নিচের দিকে নেমে আসার পথে উষ্ণ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসের মুখোমুখি হলেই সংঘর্ষ। পরিণাম, কান-ফাটানো, বুক-কাঁপানো বজ্রপাত। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, বর্ষা আসার আগে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের জেরে স্থানীয়ভাবে যে মেঘের সঞ্চার হয়, তাতে ‘তড়িৎ’ থাকে খুব বেশি। এই মেঘের উপরিভাগ দেখতে অনেকটা কুড়ুলের মতো। উচ্চতা বিপুল। বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার সময় তাতে সঞ্চিত স্থির তড়িৎ পরিবর্তিত হয় বজ্রে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, প্রাক-বর্ষা বা তার আগে স্থানীয়ভাবে তৈরি মেঘে জলকণা কম, তড়িৎকণা বেশি। তা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ১০-১২ মেগাওয়াট। বর্ষার মেঘের তুলনায় বিদ্যুৎ কম থাকে। তাছাড়া বর্ষার জলভরা মেঘের উচ্চতা বেশি হয় না। কাজেই প্রাক-বর্ষার মেঘ বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় ভরা বর্ষার বৃষ্টিও আনছে বজ্রসন্ত্রাস। যার মারক চেহারা শুক্রবারই দেখল মহানগর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.