স্টাফ রিপোর্টার: ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) তিন কংগ্রেস বিধায়কের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই বিপুল টাকা হাতবদল হয়েছিল কলকাতাতেই। প্রাথমিক তদন্তের পর এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে সিআইডির দাবি। সিআইডি আধিকারিকদের বক্তব্য, এই উদ্দেশ্যেই মধ্য কলকাতার সদর স্ট্রিটের এক হোটেলে খুব অল্প সময়ের জন্য ঘাঁটি গেড়েছিলেন তিন বিধায়ক, ওই সময়টুকুর জন্য হোটেলের রেজিস্ট্রি খাতায় কোনও এন্ট্রিও করেননি। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে সিআইডি সংগ্রহ করেছে। এবং চেষ্টা করছে মধ্য কলকাতার যে জায়গায় ৪৯ লক্ষ টাকা হাতবদল হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও জোগাড় করার।
গত শনিবার হাওড়ার পাঁচলায় হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হন ঝাড়খণ্ডের ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ক (Jharkhand Congress MLA) – নামন কোঙ্গারি, ইরফান আনসারি ও রাজেশ কাচ্ছাপ। ধরে পড়েন তাঁদের দুই সঙ্গীও। কলকাতা থেকে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় যাওয়ার পথে গাড়ির মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় ৪৯ লক্ষ টাকা। তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার গুয়াহাটি থেকে বিমানে করে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন ঝাড়খণ্ডের ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ক। গুয়াহাটি অথবা অসমের কতজনের সঙ্গে ওঁরা যোগাযোগ করেছেন, সেটাও জানার চেষ্টা করছে সিআইডি (CID)। তিন বিধায়কের মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা করে তাঁদের জেরা করা হচ্ছে।
ঝাড়খণ্ডের কুমার জয়মঙ্গল নামে অপর এক কংগ্রেস বিধায়ক রাঁচির আরগোড়া থানায় ওই তিন বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, ঝাড়খণ্ডে সরকার ভাঙার জন্য তাঁকে দশ কোটি টাকার টোপ দেওয়া হয়। কলকাতায় ডেকে তাঁকে অসমে নিয়ে গিয়ে সে রাজ্যের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, যদিও তিনি রাজি হননি। জয়মঙ্গলের অভিযোগ সম্পর্কে হিমন্তের প্রতিক্রিয়া, “বাইশ বছর ধরে কংগ্রেসে থাকার কারণে ঝাড়খণ্ড-সহ সমস্ত কংগ্রেস বিধায়কের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা শলা পরামর্শের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দলের উপর অসন্তুষ্ট হলে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কোনও মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই। এফআইআরে উনি এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যেন আমায় চেনেনই না। নিশ্চয় চাপ পড়ে তাঁকে এগুলি লিখতে হয়েছে।”
এমতাবস্থায় ধৃত তিন বিধায়কের সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কীভাবে বৈঠক হয়েছিল, বৈঠকে কী কী হয়েছিল, সেই তথ্য বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। উদ্ধার হওয়া টাকা দিয়ে ঝাড়খণ্ডে সরকার ভাঙার চেষ্টার যে অভিযোগ উঠে এসেছে, সেই তথ্যের উপরও পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রয়োজনে সিআইডির-র টিম তদন্তে অসমেও যেতে পারে।
শনিবার দুপুরে একটি বিশেষ বিমান সংস্থার বিমানে ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ক কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন। বিকেল ৩টে ৬ মিনিটে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার সদর স্ট্রিটের এক হোটেলে কালো গাড়ি করে তিনজনকে নামতে দেখা যায়। ওই হোটেলের মালিকের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে এক বিধায়কের। সোমবার হোটেলের এক কর্মচারী জানান, গত শনিবার দুপুরেই মালিক তাঁদের জানিয়েছিলেন, কয়েকজন ‘ভিআইপি’আসছেন। সেইমতো তাঁরা তৈরি ছিলেন। গেস্টরা ভিতরে ঢুকেই বাথরুমে যেতে চান। সেইমতো ১০৬ নম্বর ঘর খুলে দেওয়া হয়। ঘরের ভিতর তাঁরা ছ’মিনিট ছিলেন। মূলত ঘরের বাথরুমই ব্যবহার করেন। এর পরে চলে যান হোটেল লাগোয়া পানশালায়। এর মধ্যে বিধায়কদের পরিচিত প্রতীক কুমার নামে এক যুব কংগ্রেস নেতা হোটেলের এক কর্মীর থেকে স্কুটি নিয়ে লালবাজারে যান। লালবাজারের কাছে এক ব্যবসায়ী তথা হাওয়ালা কারবারীর থেকে টাকার ব্যাগ নেন, যা নিয়ে বিকেল ৩টে ৫০ মিনিট নাগাদ স্কুটি তে সওয়ার হয়ে তাঁকে হোটেলে ঢুকতে দেখা যায়। বিকেল চারটের পর টাকা গাড়ির ডিকিতে রেখে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন। এর পরই পাঁচলায় গাড়ি তল্লাশিতে নোটের বান্ডিল-সহ বিধায়করা পুলিশের জালে পড়ে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.