অর্ণব আইচ: ‘আমরা তিনজনেই মৃত’। খাটের উপরে রাখা বাটি। তার গায়ে লেখা ‘বিষ আছে সাবধান।’ চক দিয়েই লেখা হয়েছে সবকিছু। আর ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে তিনটি নিথর দেহ। ঠাকুরপুকুর থানার সত্যনারায়ণ পল্লির বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ঘনীভূত রহস্য। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই তিনজনের মৃত্যুর নেপথ্যে বিষের ভূমিকা রয়েছে। তবে ওই তিনজন স্বেচ্ছায় বিষ খেয়েছেন অর্থাৎ আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন করা হয়েছে তাঁদের, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। পুলিশ ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা করছে।
ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বছর আশির গোবিন্দ কর্মকার। সত্তর বছর বয়সি স্ত্রী রুনু কর্মকার এবং বছর পঞ্চাশের ছেলে দেবাশিসকে নিয়েই তাঁর সংসার। গত রবিবার গোবিন্দ কর্মকার মাথা ঘুরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান। তাঁকে তড়িঘড়ি বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় তাঁর গায়ে সামান্য জ্বরও ছিল। তবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরলেও তাঁকে ভরতি নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন গোবিন্দবাবু। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভরতি হতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। প্রায় সকলের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দেন।
মঙ্গলবার অনেক বেলা হয়ে গেলেও কারও দেখা পাননি প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হয় তাঁদের। ডাকাডাকি শুরু হয়। তবে তাতে কারও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে ঠাকুরপুকুর থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দরজা ভিতর থেকে কেউ খোলেননি। তাই বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে পুলিশ। তবে ঘরের ভিতরে ঢুকে অবাক প্রায় সকলেই। পুলিশ এবং প্রতিবেশীরা দেখেন, ঘরের মেঝেতে চক দিয়ে লেখা রয়েছে, “আমরা তিনজনেই মৃত।” খাটের উপরে একটি বাটি রাখা হয়েছে। তার গায়ে চক দিয়ে লেখা, “এর মধ্য বিষ আছে সাবধান।” ঘরের মধ্যেই পড়ে রয়েছে গোবিন্দবাবু, তাঁর স্ত্রী রুনু এবং ছেলে দেবাশিসের নিথর দেহ। ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ দেহ তিনটি উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য বিদ্যাসাগর হাসপাতালে দেহ পাঠানো হয়েছে। তিনজনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই পুলিশের। আত্মহত্যা নাকি খুন করা হয়েছে তাঁদের, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.