ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: গোলপার্ক থেকে সূত্রপাত। তারপর কসবা থেকে ভবানীপুর। শহরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এটিএম জালিয়াতির জাল। স্কিমার, এই শব্দই এখন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে শহরবাসীর কাছে। কারও ১০ হাজার, কারও ১৫ হাজার কারও বা খোয়া গিয়েছে ৪০ হাজার টাকা। কেউ ব্যাংক মারফত টাকা ফেরত পেয়েছেন, কেউ পাননি। তদন্তে নেমে দুই রোমানিয়ানকে আগেই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এবার তাদের সূত্র ধরেই জালে আরও তিন দুষ্কৃতী। ভবানীপুর থানার পুলিশ ও গুণ্ডাদমন শাখার আধিকারিকদের যৌথ অপারেশনেই এই সাফল্য।
জানা গিয়েছে, রোমানিয়ানদের সূত্র ধরেই এই তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি করে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। ধৃতদের নাম সইদ সায়েদ (৩৫), রোহিত নায়ার (৩৫) ও সুধীর রাজেন (৩১)। দু’জন মুম্বইয়ের মীরা রোডের বাসিন্দা। একজন নালাসোপারা এলাকার। তিনজনেই নাম পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতায় রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারেছে, কসবা, নিউ মার্কেটের এটিএমে স্কিমার বসিয়ে বহু গ্রাহকের তথ্য হাতিয়েছে ধৃতরা।
[কসবার পর এবার ভবানীপুর, এটিএমে স্কিমার লাগাতে গিয়ে পাকড়াও তিন যুবক]
এদিকে ঘটনাচক্রে ভবানীপুরের একটি এটিএমে স্কিমার বসাতে গিয়ে হাতেনাতে পাকড়াও হয় তিন যুবক। এলগিন রোডের ওই বেসরকারি ব্যাংকের এটিএমে আসে তিনজন। গ্রাহক হিসাবে একজন ভিতরে ঢোকে। অন্য দু’জন বাইরে অপেক্ষা করছিল। ঘটনাচক্রে সেই সময় নিরাপত্তারক্ষীর রিলিভার হিসেবে সফিউদ্দিন শেখ এটিএমের বাইরে পাহাড়ায় ছিলেন। এটিএমের ভিতরে গ্রাহকের পরিচয় দিয়ে আসা একজনের হাত থেকে ভারী কোনও বস্তু মাটিতে পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পান তিনি। তাঁর নজরে আসে হাত থেকে পড়ে যাওয়া স্ক্রু-ড্রাইভার মাটি থেকে তুলছে ওই ব্যক্তি। সফিউদ্দিনের কথায়, “একটু নজরদারি শুরু করতেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। সন্দেহ আরও বেড়ে যাওয়ায় এটিএমের ভিতরে ঢুকে দেখি, স্কিমার লাগানোর চেষ্টা চলছে। এরপরই বাইরে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পুলিশে খবর দিই।” এলাকার লোকজনও ছুটে এসে সাহায্য করে নিরাপত্তারক্ষীকে। এরপর ভবানীপুর থানার পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। তার কাছে স্কিমার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে লালবাজার। ধরা পড়ে যায় বাকি দু’জনও। ধৃতদের কাছে ব্যাটারি, ক্যামেরা-সহ স্কিমার লাগানোর সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, তারা যে ওই এটিএমে স্কিমার লাগানোর চেষ্টা করছিল, জেরায় সেকথা স্বীকার করেছে ধৃতেরা। সংশ্লিষ্ট এটিএমটি সিল করে দেয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, এই এটিএম থেকেই স্কিমার জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ঘটনা কিছুদিন আগের। এটিএমের কাছেই অবস্থিত ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি। সেই সময় প্রতিষ্ঠানে ভরতি চলছিল। ফলে স্কিমার লাগানো এটিএম থেকে একে একে টাকা তুলেছিলেন ১৯ জন। আর তাঁদের লেনদেনের যাবতীয় গোপন তথ্য উঠে এসেছিল ‘স্কিমার’ যন্ত্রটির ১৬ জিবি মেমোরি কার্ডে। পরে আরও অনেকে টাকা তোলার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সে সময়ও নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় অনেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, এটিএম জালিয়াতির এই জাল সুদূর বিস্তৃতি। তার হদিশ পেতে ধৃতদের হেফাজতে চাওয়া হয়েছে।
[গড়িয়ায় গাড়ি থামিয়ে তৃণমূল যুবনেতার উপর হামলা, আটক ২]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.