নিরুফা খাতুন: উত্তর কলকাতায় অধিকাংশ রক্ষণশীল পরিবার। পুজোয় আড়ম্বরে তাঁরা কোনও খামতি রাখতেন না। পাড়ায় বারোয়ারি পুজোতেও তাঁদের প্রভাব থাকত। সেখানে যৌনকর্মী কিংবা তাঁদের সন্তানদের ছায়া পড়া যেন অশুভ। এখন সেই রক্ষণশীল এলাকায় পুজোমণ্ডপে যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রমেশ দত্ত স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব(Kolkata Durga Puja ) এই মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। উত্তর কলকাতার রামবাগান অঞ্চলের এক পাশে রয়েছে রেড লাইট এলাকা। আর এক পাশে বসতি। পুজোর সময় যৌনকর্মীদের দূরে ঠেলে রাখা হত। তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও পাড়ার মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হত না। অন্যদিকে অর্থ না থাকায় বসতিবাসীরা পুজোর আয়োজন করতে পারত না। প্রদীপের নিচে অন্ধকার দেখতে পেয়েছিলেন উত্তর কলিকাতা আনন্দ মন্দিরের সদস্যরা।
যৌনকর্মী ও বসতির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার পাশাপাশি উৎসবের দিনগুলি সকলে একসঙ্গে আনন্দ করার উদ্যোগ নেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেজন্য পুজোর দায়িত্বও তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রতিমা থেকে মণ্ডপসজ্জা, ঠাকুরের প্রসাদের ফল কাটা, ভোগ রান্না, পরিবেশন সবই বসতি ও যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরা সামলে থাকেন। এবছর ৭৮ বছরে পা দিয়েছে এই পুজো। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর সরকারের কথায়, “উত্তর কলকাতা মূলত রক্ষণশীল। এখানে অনেক বনেদি পরিবারের বাস। যৌনকর্মীদের সন্তানরা মণ্ডপ থেকে দূরে থাকত। উৎসবের দিনগুলিতে সবাই আনন্দ করত। ওরা তখন ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকত। বিষয়টি উপলব্ধি করার পর ঠিক করি, ওদেরও পুজোয় অংশগ্রহণ করাতে হবে। সেইসঙ্গে পাশের বসতির ছেলেমেয়েদেরও যোগদান করানো হয়। তাদের জন্য স্কুল চালু করা হয়। পুজোর দায়িত্বও তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওরাই সবকিছু সামলায়। আমরা শুধু তদারকি করে থাকি।”
এখন অষ্টমীর দিন মণ্ডপে যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে রক্ষণশীল পরিবারের সদস্যরা অঞ্জলি দেন। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হত। তবে ধীরে ধীরে সব বৈষম্য দূর হয়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.