শুভময় মণ্ডল: নির্বাচনী মরশুমে ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এখানেও এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। এখন অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তাই জনসংযোগের অন্যতম হাতিয়ার মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনে প্রচার বার্তা পাঠিয়ে ভোটারের আরও কাছে পৌঁছনোর পন্থা বহুল জনপ্রিয়। তার ফায়দা তুলেছে বহু রাজনৈতিক দল। বিজেপি, কংগ্রেস, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ-ও সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছে। ২০১৫ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির ভোটারদের ফোনে ‘হ্যালো, হ্যালো, ম্যায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল বোল রহা হুঁ…’ এই বার্তা অহরহ পৌঁছে গিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসও ২০১৪ সালের লোকসভা, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জনসংযোগের এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ভোটারদের ফোনে পৌঁছে যায়। তবে এবারের লোকসভা ভোটে জনসংযোগের ক্ষেত্রে ফোনালাপের রাস্তায় হাঁটছে না তৃণমূল। কেন সেই রাস্তায় জনসংযোগ নয়? তার অন্যতম কারণ হিসাবে তৃণমূলের ব্যাখ্যা, কারও গোপনীয়তায় অনুপ্রবেশ নয়। তাই ভোটারদের দোরে দোরে পৌঁছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জনসংযোগের মাধ্যমে ভোট বৈতরণী পার করবে ঘাসফুল শিবির।
দলীয় সূত্রে খবর, ফোনে বার্তা পাঠানো, ভয়েস মেসেজ এসমস্ত জনসংযোগের পদ্ধতি এখন সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর প্রচারের যুগে ভোটারদের বিব্রত করে। তৃণমূলের বক্তব্য, ভোটারদের কোনওমতেই বিরক্ত বা বিব্রত করার রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না দল। অনেকসময় বারবার ফোন এলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাঘাত ঘটে। আর দল কোনওভাবেই কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ। তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ জনসংযোগেই জোর দিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দেয় দল। তাই এমন কিছু এবার করা হবে না যাতে সেই গোপনীয়তায় ব্যাঘাত ঘটে। আর ভোটারদের গোপন তথ্যরও অপব্যবহার করা যাবে না। তাই ফোন মারফত জনসংযোগের রাস্তায় এবার হাঁটছে না দল।
[আরও পড়ুন: প্রচারের শেষবেলায় চমক, নতুন ভোটারদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে মহুয়া মৈত্র]
প্রসঙ্গত, আধার ইস্যুতে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সরব হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সওয়াল করেছিলেন। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলকের বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছিলেন মমতা। তাঁর অবস্থান ছিল, দেশের মানুষের গোপন তথ্যের অপব্যবহার করা যাবে না। কেন্দ্রকেও তোপ দেগেছিলেন তিনি। জনসংযোগের ক্ষেত্রেও ফোন করে প্রচারের বিষয়টিকেও ভোটারের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা হিসাবেই ধরছে দল। তাই এবার সেই পদ্ধতি থেকে বিরত থেকেছে দল। কোনও দলীয় প্রার্থী বিক্ষিপ্তভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করার খবর মিলেছে। কিন্তু দলের তরফে সরকারিভাবে এই পদ্ধতি এবার অবলম্বন করা হচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর।
বস্তুত, ২০০৪ সালে প্রথম টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থাকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক দলগুলি এই ধরনের জনসংযোগের রাস্তায় হেঁটেছিল। সেবারে লোকসভা ভোটে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ডেড বার্তা ‘ম্যায় অটলবিহারী বাজপেয়ী বোল রহা হুঁ…’ সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোনে পাঠানো হত। তারপর বিগত বছরগুলিতে নির্বাচনী মরশুমে এই পদ্ধতিতে ডান-বাম বহু রাজনৈতিক দল জনসংযোগ করে। তৃণমূলও সেই পথেই হেঁটেছিল। তবে এবার পায়ে হেঁটেই ভোটারের ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছেন ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীরা।
[আরও পড়ুন: প্রচারে ভোজপুরী গানে কোমর দুলিয়ে মঞ্চ মাতালেন মুনমুন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.